বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ, পরিস্থিতি উন্নয়নে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আহ্বান

পোশাকশ্রমিক
আশুলিয়ায় কারখানায় যাচ্ছেন পোশাকশ্রমিকরা। ছবি: পলাশ খান/স্টার

বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্দেশনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও পোশাক রপ্তানিকারকরা। অন্যদিকে, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতা ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পরিস্থিতি উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।

কয়েকটি দেশের শ্রম অধিকার নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল রোববার দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হয়।

'বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান উন্নয়ন' শীর্ষক প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম প্রকাশের সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, 'যারা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, শ্রম অধিকারকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে হুমকি দেয়, ভয় দেখায় ও আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।'

দোষীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, জরিমানা ও ভিসা বিধিনিষেধের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এ কে আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি চালান যায় যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের কারখানার পোশাক রপ্তানির বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন।'

এই প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করে।

তিনি সরকারকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসানও একই মত দেন।

টেলিফোনে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিণতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।'

তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের মনে রাখা উচিত—আফ্রিকা, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোয় শ্রম অধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও, তারা সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ অনেক বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়।'

তার মতে, বাংলাদেশে ধাপে ধাপে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রম অধিকার ও এর চর্চা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডেইলি স্টারকে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বলেছেন, 'দেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না।'

'ব্লিঙ্কেন শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে শ্রমিক নেতারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

'পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে অস্থিরতায় চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে,' উল্লেখ করে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিক নেতারা সাধারণত সংগঠনের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ও চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে অসুবিধায় পড়েন।'

তার মতে, শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও কারখানা মালিকদের সক্রিয় হতে হবে।

শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের সব মামলা প্রত্যাহার, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি তিনি বিদেশে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সম্প্রতি ঘোষিত মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ দেন।

ইন্ডাট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি আমিরুল হক আমিনও দেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও কারখানা মালিকদের আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪৩টি পুলিশি মামলা প্রত্যাহার ও আটক ১১৫ শ্রমিক ও সাত শ্রমিক নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

এ ছাড়াও, তিনি চার শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত অবিলম্বে শুরুর দাবি জানান।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া ও এসব উদ্বেগের সমাধান করা। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার ও তুলার প্রধান উৎস।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের উচিত শ্রম অধিকার বিষয় ও ট্রেড ইউনিয়নের উদ্বেগের সমাধান করা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাও এমন পরামর্শ দিয়েছে।'

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হচ্ছে ব্লিঙ্কেনের ভাষণটি খুব সতর্কতার সঙ্গে লেখা হয়েছে।'

'রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শুল্ক সুবিধা দেয় না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এখন উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজনীয়তা মেনে নেওয়া উচিত।'

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক দেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। গত অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক পণ্য।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago