গত অর্থবছরেও কাটেনি রপ্তানি খরা

তৈরি পোশাক, রপ্তানি আয়, ইপিজেড, এনবিআর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো,
গ্রাফিক্স: আনোয়ার সোহেল

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমায় গত অর্থবছরে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি চার দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। এই পরিসংখ্যান দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতের ধীরগতির প্রতিচ্ছবি।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, গত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানির এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এখনো পুরো অর্থবছরের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেনি। রপ্তানি তথ্যে গরমিলের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানটি সঠিক প্রতিবেদন করতে তিন মাস সময় নিয়েছে।

তবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে, সে তথ্যের সঙ্গে ‍আলাদাভাবে প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যের পার্থক্য এখনো থেকে গেছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ ব্যাংক যে রপ্তানির তথ্য দিয়েছে তা এফওবি বা ফ্রি অন বোর্ড তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় শতাংশ কম।

যখন এফওবি ভিত্তিতে পণ্য রপ্তানি করা হয়, তখন সেগুলোর দায়বদ্ধতা ও মালিকানা ক্রেতা বহন করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, এফওবি বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) থেকে চালানের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।

পৃথকভাবে প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে ব্যবহার করা পরিসংখ্যানে তিন দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের ফারাক দেখা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামগ্রিক রপ্তানি গণনায় এফওবি'র তথ্য উল্লেখ করা হয় না। সামগ্রিক তথ্য ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই বিওপিতে ব্যবহৃত রপ্তানি পরিসংখ্যান ও সামগ্রিক রপ্তানির মধ্যে পার্থক্য থাকে।'

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'তাদের নিজেদের হিসাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমের দেশগুলোতে ব্যবসা মন্দা দেখা দেয়। যে কারণে অনেকের কাছে পণ্য জমে যায়। তাই বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দেন।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওভেন পোশাক রপ্তানি এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে ১৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসা পণ্য নিটওয়্যারের রপ্তানি কমেছে পাঁচ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছর এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিদেশি ক্রেতারা সাধারণত জুলাই ও আগস্টে কার্যাদেশ দেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এখন তারা সতর্ক। তবে ভালো দিক হলো ক্রেতারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়াবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শীর্ষ ১০ পণ্যের মধ্যে কৃষি, রাসায়নিক ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এরপর আছে কৃষি ও রাসায়নিক পণ্য।

জানতে চাইলে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, 'সরকার কয়েকদিনের জন্য সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। এটি কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।'

তার মতে, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। পরে সেটা কমায় রপ্তানি বেড়েছে। তবে অর্থবছরের শেষের দিকে লোহিত সাগরে সংকট তৈরি হলে রপ্তানি আবার হোঁচট খেয়েছে। এখনও সেই সংকট আছে। তবে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কম থাকলে চলতি অর্থবছরেও রপ্তানি বাড়তে পারে।'

দেশের কাপড় রপ্তানি ২৪ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রায় ১২ শতাংশ এবং হিমায়িত ও তাজা মাছ রপ্তানি ১১ শতাংশ কমেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি খাতে চতুর্থ শীর্ষ পণ্য হোমটেক্সটাইল থেকে এসেছে ৭৮২ মিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলার।

তৃতীয় শীর্ষ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে এক দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল এক দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

এবিসি লেদার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান বলেন, 'চলমান যুদ্ধের কারণে ইউরোপে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। তবে জাপানে বেড়েছে।'

তিনি বলেন, 'চামড়ার জুতার তুলনায় কৃত্রিম উপকরণের জুতা সস্তা। এক জোড়া চামড়ার জুতার দাম ১৮ থেকে ২২ ডলারের মধ্যে। অন্যদিকে কৃত্রিম উপকরণের জুতার দাম তিন থেকে ১০ ডলার। এ কারণে, কৃত্রিম উপকরণের জুতা রপ্তানি বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

2h ago