খান আতাউর রহমান: শিল্পে বহুমুখী বিচরণ যার

ছবি: সংগৃহীত

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক, অভিনেতা, সুরকার ও গীতিকার খান আতাউর রহমানের প্রয়াণ দিবস আজ ১ ডিসেম্বর। যিনি সকলের কাছে খান আতা নামেই পরিচিত ছিলেন।

বহুমুখী প্রতিভায় সমৃদ্ধ এই শিল্পী 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা,' 'সুজন সখী'সহ অসংখ্য কালজয়ী সিনেমা ও গান উপহার দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে খান আতা ছিলেন এক অনন্য বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব। 

খান আতার অভিনয়জীবন শুরু হয় উর্দু ছবি 'জাগো হুয়া সাভেরা ' দিয়ে। প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র এহেতেশাম পরিচালিত—'এ দেশ তোমার আমার' । তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দ্রুতই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। জহির রায়হানের অমর সৃষ্টি 'জীবন থেকে নেয়া'–তে তার অভিনয় আজও নতুন প্রজন্মকে মুগ্ধ করে।

তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা 'অনেক দিনের চেনা' মুক্তি পায় ১৯৬৩ সালে। তবে তাকে সর্বাধিক খ্যাতি এনে দেয় ঐতিহাসিক ছবি 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা'। এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন তিনি।

আরও উল্লেখযোগ্য ছবি হলো 'সাত ভাই চম্পা', 'অরুণ বরুণ কিরণমালা', 'আবার তোরা মানুষ হ', 'জোয়ার ভাটা', 'হিসাব নিকাশ', 'পরশ পাখি'। তার পরিচালিত শেষ সিনেমা 'এখনো অনেক রাত'।

অভিনেত্রী ববিতা বলেন, "খান আতা ভাইয়ের মতো গুণী মানুষ কমই দেখেছি। তিনি একইসঙ্গে পরিচালক, অভিনেতা, কাহিনীকার, সুরকার, গীতিকার—অনেক পরিচয় তার। এদেশের সিনেমাকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি তাদের অন্যতম।"

তিনি আরও বলেন, "খান আতা একজনই। তার সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। কী অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ ছিলেন। কাজমুখর জীবন ছিল তার। যুগ যুগ ধরে তিনি তার কাজের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন।"

গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও খান আতা অমর হয়ে আছেন বহু জনপ্রিয় গানের জন্য। তার লেখা ও সুর করা 'পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে' (সূর্যস্নান) সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় গান।

'এক নদী রক্ত পেরিয়ে'—আবার তোরা মানুষ হ ছবির এই কালজয়ী গানের গীতিকার ও সুরকারও তিনি।

'শ্যামল বরণ মেয়েটি' (কাঁচের দেয়াল) এবং 'এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে' (জীবন থেকে নেয়া)—দুটোই তার কণ্ঠে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।

সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে অমর হওয়া 'এ কি সোনার আলোয়' গানটির গীতিকার ও সুরকারও ছিলেন খান আতা।

সংগীতে অসাধারণ অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে তিনি বহু সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার পরিচালিত 'সুজন সখী' তিনটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। একই বছর তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবেও পুরস্কৃত হন।

১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের রামকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খান আতাউর রহমান। তার পুত্র জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আগুন এবং কন্যা সংগীতশিল্পী রুমানা ইসলাম।

চলচ্চিত্র, সংগীত ও অভিনয়ে অনন্য অবদানের মাধ্যমে খান আতাউর রহমান বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে আছেন। ১৯৯৭ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তার সৃষ্টি যুগ যুগ ধরে দর্শক-শ্রোতাদের মনে জায়গা করে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh to boost LNG imports on lower global prices

Falling spot prices and weak demand in Asia prompt Dhaka to look beyond its initial import plan for this year

11h ago