বন্যা

নৌকার অভাবে চট্টগ্রামে উদ্ধারকাজ ব্যাহত

পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বন্যায় চট্টগ্রামের সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায়, নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপেজলার বাসিন্দাদের। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

ভারী বর্ষণে সৃষ্ট উজানের পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বন্যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপেজলায় নৌকার অভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস। 

কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রশাসনকে জানিয়েও মিলছে না নৌকা। সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ভরসা শুধু একটি রাবারের নৌকা।

অন্যদিকে বান্দরবন জেলার ৫টি ফায়ার স্টেশন এখনো পানির নিচে। দুর্যোগের সময়ে নিজেদের ও সরকারি সরঞ্জাম রক্ষা করতে লড়াই করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এই ঘটনার জন্য কোনো প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের নিজস্ব কোনো নৌকা বা জলযান নেই। হালদা নদী থেকে একটি রবারের বোট নিয়ে আমরা সাতকানিয়ায় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ইউএনওকে নৌকা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। চট্টগ্রাম থেকে একটি নৌকা কর্ণফুলী দিয়ে সাতকানিয়া নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও যাওয়ার পথে গত পরশু সেটি উল্টে যায়। পরে আমরা সেখান থেকে সরে আসি।'

তবে সার্বিক বিষয় মনিটরিং করার জন্য একটি সেল স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখান থেকে কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বন্যায় চট্টগ্রামের সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায়, চলাচল করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশিরভাগ স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে দুর্দশায় পড়েছেন পার্বত্য অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। 

গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। ৩ উপজেলা পানির নিচে থাকায় বন্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন লাখো মানুষ। 

এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। অন্যদিকে চুলা পানির নিচে থাকায় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে বন্যার পানিতে ডুবে যায় একটি নৌকা। এ ঘটনায় ২ শিশুসহ ৩ জন এখনো নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'স্রোতের প্রবল তোড়ে ৮ জনসহ একটি নৌকা পানিতে উল্টে যায়। ৪ জন সাঁতরে উঠে আসতে পারলেও ৩ শিশুসহ আরেকজন পারেনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ৫ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয় বুধবার বিকেলে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।'

এদিকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, উজানের প্রবল পাহাড়ি ঢলের কারণে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলার সাব-স্টেশনগুলোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। 

গত ৩ দিন ধরে ২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীণ অবস্থায় আছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকেল থেকে সাতকানিয়ায় পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। উঁচু এলাকা থেকে পানি নামলেও নিচু এলাকায় এখনো পানি আছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ পরিবার। এর মধ্যে চন্দনাইশে ৫ হাজার পরিবার, সাতকানিয়ায় ২২ হাজার ৫০০ পরিবার, লোহাগাড়ার ৪ হাজার এবং বাঁশখালীতে ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।

জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ থেকে এসব এলাকায় শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধ করণ ওষুধসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
IMF Loan to Bangladesh: IMF recommends calibrated monetary tightening, exchange rate flexibility

IMF to review economy, loan programme

The International Monetary Fund (IMF) has begun a dual-track assessment of Bangladesh, combining the fifth review of its $5.5 billion loan programme with a comprehensive annual audit of the country’s economy under Article IV obligations...In its initial meeting with Finance Secretary

3h ago