‘লাইসেন্স ফির চেয়ে আন্ডার টেবিলের খরচ বেশি’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: স্টার

পেট্রলপাম্পের বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্সের ফি যতটা, তার চেয়ে 'আন্ডার টেবিলের' খরচের অংক কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি করেছে পেট্রলপাম্প মালিকদের একটি সংগঠন।

আজ বুধবার সংগঠনটি জ্বালানি তেলের কমিশন বাড়ানোর দাবিতে ৩১ আগস্ট ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রতীকী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

এরমধ্যে দাবি না মানলে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকিও দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

তেল বিক্রির কমিশন বাড়ানোর দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, 'এতদিন আমরা ডিলারশিপ লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের এর বাইরেও পরিবেশ, ফায়ার এবং লেবার লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। উক্ত লাইসেন্সগুলোর ফিসের যে অংক, লাইসেন্স নিতে ও নবায়ন করতে আন্ডার টেবিলের অংক কয়েকগুণ বেশি।'

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এর চেয়ে খোলাসা করে বলা সম্ভব নয়। আপনারা (সাংবাদিকরা) এই কথার মানে বুঝেন। আপনারা জানেন না, এমন কিছুই ঘটে না।'

তিনি বলেন, '২০১৩ সালে তেল বিক্রির কমিশন অকটেন ও পেট্রলে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও ডিজেলে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দাম বাড়ানোর পরে যে কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।'

তিনি এই কমিশন ৭ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে বলেন, '২০১৩ সাল থেকে আমরা এ দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কর্মসূচিও পালন করেছি। পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু পরে আর দাবি মানা হয়নি।'

নাজমুল হক জানান, তারা চাইলে দেশে অচলাবস্থা তৈরি করতে পারেন, কিন্তু তারা তা করেননি। এখন তারা ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি দিচ্ছেন। কারণ, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের পরিমাপে কারচুপি রোধে অভিযানের নামে পেট্রলপাম্প মালিকদের 'অযৌক্তিকভাবে' জরিমানা, হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'মিডিয়ার ভয়ে ওরা (ভোক্তা অধিদপ্তর, মোবাইল কোর্ট ও বিএসটিআই) অভিযান চালায়। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন সব মালিক চোর, অবৈধ ও অসাধু ব্যবসায়ী। কিন্তু পরে আর নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না।'

'কমিশন কম থাকায় অনেক সময় মালিকরা বাধ্য হয়ে কারচুপি করেন' দাবি করে নাজমুল হক বলেন, 'আমরা অভিযান বিরোধী নই। সব সেক্টরের মতো আমাদের সেক্টরেও অসাধু ব্যবসায়ী আছে। কিন্তু তা ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিং দরকার। জ্বালানি মন্ত্রণালয় এর আগে সিদ্ধান্তও নিয়েছে যে, তেল কোম্পানি, বিএসটিআই, এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করবে। কিন্তু তা না করে অভিযানের নামে…। তাদের খুশি করতে পারলে সব ঠিক, খুশি না করতে পারলে যেকোনো উপায়ে জরিমানা করা হয়।'

তিনি বলেন, 'ভোক্তা অধিদপ্তর ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। তেল পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা দেখবে। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে জরিমানা করে আসামি বানিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করে।'

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ইস্যুকৃত অনাপত্তিপত্রের নবায়ন না দেখাতে পারায় একটি পাম্প মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু ওই অনাপত্তিপত্র নবায়নের কোনো বিধানই নেই, সেটি একবারের জন্যই প্রযোজ্য।'

কমিশন বাড়ানো ছাড়াও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের দাবির মধ্যে আছে- তেলের কারচুপি রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, অভিযানের সময় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বা বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি রাখা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ইজারা মাশুল যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করা এবং রাস্তায় জ্বালানি পরিবহনের সময় ট্যাংক-লরির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা ইত্যাদি।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

4h ago