চুক্তিতে আদানিকে ৮ ‘অসম’ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ: বেন

গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইনসেটে গৌতম আদানি। ফাইল ফটো

আদানির বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের টাকায় ভারতীয় শিল্প-গোষ্ঠীটিকে লাভবান করবে উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)।

৮টি কারণ উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, বিদ্যুৎ আমদানির এই চুক্তিটি 'অসম'। এই চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার পাঠানো বিবৃতিতে 'জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী' এই চুক্তির পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বেনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক অলস অবস্থায় পড়ে থাকে। এ অবস্থায় আদানি থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় নির্মিত আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চলতি মাস থেকে বাণিজ্যিকভাবে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হওয়ার কথা।

পরিবেশ নেটওয়ার্কের গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর মো. খালেকুজ্জামান এবং এর এনার্জি এক্সপার্ট প্যানেলের চেয়ারম্যান আহমেদ বদরুজ্জামানের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, 'যে পরিস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। এর আওতায় আদানি পাওয়ারকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা বাংলাদেশের কোনো বিদ্যুৎ কোম্পানি ভোগ করে না।'

সংগঠনটি বলছে এই বিদ্যুৎ চুক্তির মাধ্যমে আদানি গ্রুপকে ৮টি 'অন্যায্য সুবিধা' দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমত, বাংলাদেশে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কয়লার ব্যবহার করা হয়, কিন্তু আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ কম-বেশি করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে বেশি পরিমাণ কয়লা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আদানিকে দেওয়া এই বিশেষ সুবিধার কারণে বাংলাদেশকে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি গুনতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ৪ মাস আগেই আদানি গ্রুপের কাছে বিদ্যুতের চাহিদার কথা জানিয়ে কি পরিমাণ কয়লা কিনতে হবে তার চাহিদাপত্র দিতে হবে। ফলে কোনো কারণে পিডিবি কম বিদ্যুৎ কিনলেও পুরো কয়লার দাম দিতে হবে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশকে আদানি পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুতের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কিনতে হবে এবং কোনো কারণে কিনতে না পারলে জরিমানাও দিতে হবে।

চতুর্থত, পিডিবির কারণে আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টের বাণিজ্যিক উৎপাদন বিলম্বিত হলে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, যেটা অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিতে নেই।

পঞ্চমত, আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টে ব্যবহৃত কয়লার সিস্টেম লসের ভর্তুকি বাংলাদেশকে দিতে হবে।

ষষ্ঠ, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম আদানি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ আদানি গ্রুপ নিজেই নিজেদের খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহনসহ পুরো প্রক্রিয়া নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করবে।

সপ্তম, বাংলাদেশ ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানির সঙ্গে এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করার পর ভারত সরকার ২০১৯ সালে  বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' হিসেবে ঘোষণা দেয়। ফলে আদানি গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা পায়। কিন্তু এই সুবিধার কথা তারা পিডিবির কাছে গোপন করে।

অষ্টম, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে এই চুক্তিতে প্রকল্পের সব ধরনের ঝুঁকি বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে বেশ কিছু বিষয় মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘Free Palestine’ lantern lights up Ramu sky on Probarona Purnima

Once scarred by 2012 communal violence, Ramu glows with messages of peace

2h ago