রিসোর্টের দাপটে সোনাদিয়া দ্বীপে ধ্বংসের মুখে বন
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে একের পর এক চলছে রিসোর্ট নির্মাণ। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে বনভূমি ও বন্যপ্রাণী।
পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে ইতোমধ্যে কয়েকটি রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরও তিন-চারটি নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝাউবন কেটেই এসব রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপে প্রায় নয় হাজার একর উপকূলীয় ও প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) রয়েছে। চিংড়িঘের সম্প্রসারণে বনের জমি দ্রুত দখল হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি রয়েছে দূষণ—তবে এসব বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেই।
এই বন ধ্বংস হয়ে গেলে দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে, বলছেন পরিবেশবাদীরা সংগঠকরা। তাদের মতে, 'উপকূলীয় এই বন এলাকা পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।'
স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি সৈকতের কাছে সরকারি জমি দখল করে বন উজাড় করে রিসোর্ট নির্মাণ করছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে, যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, গত বছর পর্যন্ত সোনাদিয়ায় দুতিনটি ছোট অবৈধ রিসোর্ট এবং কিছু অস্থায়ী কাঠামো ও তাঁবু ছিল। গত তিন মাসে নতুন করে উপকূলজুড়ে ১০ থেকে ১২টি কটেজের মতো রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এই নির্মাণকাজে বনের গাছ কেটে সেই কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। আরও অন্তত তিনটি কাঠের রিসোর্ট নির্মাণাধীন।
সৈকতে রাত কাটাতে এসব রিসোর্ট থেকে পর্যটকদের তাঁবু ভাড়াও দেওয়া হয়। রাতে লাল-নীল আলো জ্বালিয়ে রাখতে তারা জেনারেটর ও সোলার প্যানেল ব্যবহার করেন। সংরক্ষণবিদদের মতে, ডিম পাড়তে আসা সামুদ্রিক কচ্ছপ ও পাখিদের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের উপকূলীয় বন বিভাগের ডেপুটি রেঞ্জার এবং গোরকঘাটা ও চরণদ্বীপের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, রিসোর্ট নির্মাণের বিষয়টি তারা জানেন। তবে সঠিক সংখ্যা তারা এখনো জানতে পারেননি।
ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০১৭ সালে এক হাজার এক টাকার বিনিময়ে দ্বীপের নয় হাজার ৪৬৭ একর জমি নেয়। এরপর চিংড়িঘের স্থাপন ও ব্যাপক হারে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি মামলাও করে।
চলতি বছরের ৫ মে ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার ওই বরাদ্দ বাতিল করে বন বিভাগকে জমি ফিরিয়ে দেয়।
আয়ুব আলী জানান, এখনো গেজেট না হওয়ায় বন কর্মকর্তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানো হয়েছে।'
'রিসোর্ট নির্মাণ, উচ্চ শব্দ ও উজ্জ্বল আলো সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানগুলোকে হুমকির মুখে ফেলছে। কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব না হলে তারা সৈকতে আসা বন্ধও করে দিতে পারে,' বলেন নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাইয়ুম।
তার মতে, প্রায় ১৭০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সোনাদিয়াকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে এবং দ্বীপটিতে প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ ও ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। অবৈধ পর্যটন কার্যক্রমের কারণে এই জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কাইয়ুম এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানান।
দ্বীপের সম্পদ রক্ষায় সোনাদিয়া ফরেস্ট বিটে চারজন বন রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালীর ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ।
যোগাযোগ করা হলে তিনি আরও বলেন, 'শিগগির যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।'
'আগে সতর্ক করা হলে আরও আগেই অভিযান চালানো যেত,' যোগ করেন তিনি।


Comments