সাভারে ট্যানারির দূষণ: শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে তলব করবে সংসদীয় কমিটি

অব্যবস্থাপনায় সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ড্রেনেজ সিস্টেম। স্টার ফাইল ছবি

সাভারের চামড়া শিল্প থেকে পরিবেশ দূষণ বন্ধে 'দৃশ্যমান অগ্রগতি' না হওয়ায় এবার শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে তলব করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

আজ সোমবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এই ২ সচিবকে তলব করা হবে।

সংসদীয় কমিটি একইসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে আমন্ত্রণ জানাবে।  

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, `সাভারের ট্যানারির দূষণ নিয়ে আমরা দেখছি, গত দেড় বছরে শুধু মিটিংই হচ্ছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তাদের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। আমরা বলেছি, এখন থেকে এ নিয়ে যত মিটিং হবে তাতে নেতৃত্ব দেবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় অন্যদের ডাকবে। কারণ এটা পরিবেশের বিষয়।'

সাবের হোসেন বলেন, `সাভারের ট্যানারি শিল্প থেকে পরিবেশ দূষণ রোধে কী করা হচ্ছে, সেজন্য আগামী বৈঠকে শিল্প ও বাণিজ্য সচিবকে ডাকা হবে। আমরা শিল্পমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানাব।'  

২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে সাভারের হেমায়েতপুরে শিল্পনগরী ট্যানারিগুলো যেতে বাধ্য হয়। আর এ শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ এরও অর্ধযুগ আগে থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

ওই নগরীতে ১৫৫টি ট্যানারিকে জমি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরি করে দেওয়ার কথা বিসিকের। তারা এ জন্য একটি চীনা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয় ২০১২ সালে। তবে তারা যথাসময়ে সিইটিপি পুরো চালু করতে পারেনি। আবার এই সিইটিপির সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ট্যানারি থেকে সৃষ্ট দূষণে ধলেশ্বরী নদী ধ্বংসের পথে। 

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার।

সংসদীয় কমিটি বলছে, দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশছে। এর বাইরে ক্রোমিয়াম শোধনের ব্যবস্থাও নেই সেখানে।

গত বছরের অগাস্টে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হওয়ায় সাভারের চামড়া শিল্প নগরী 'আপাতত বন্ধ রাখার' সুপারিশ করে।

কমিটির সুপারিশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কাছে চিঠি দেয়। চামড়া শিল্পনগরী 'কেন বন্ধ করা হবে না', তা বিসিকের কাছে জানতে চায় সংসদীয় কমিটি। তবে ওই বক্তব্য 'সন্তোষজনক নয়' বলে জানিয়েছিল সংসদীয় কমিটি।

এরপর সংসদীয় কমিটি প্লট ধরে ধরে অভিযান চালিয়ে দূষণে জড়িত ইউনিটগুলো বন্ধের সুপারিশ করে। গত ১৭ জুলাই কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ আসে।

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন বলেন, `আমাদের জানানো হয়েছে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কমপ্ল্যায়েন্স অনুসরণ করেছে। তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু যারা করছে না, তাদের কারখানা বন্ধ করতে হবে।'

পরিবেশ দক্ষতা সূচক

সাবের হোসেন বলেন, `পরিবেশের গুণমান জানার জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পরিবেশ দক্ষতা সূচক এবং স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং প্রণয়ন করা হবে।' 

তিনি বলেন, `পরিবেশ দক্ষতা সূচক প্রণয়নের অংশ হিসেবে প্রথমে ৪/৫ টি নির্দেশক ,যেমন বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ বিবেচনা করা হবে।'   

পরিবেশ দক্ষতা সূচক প্রণয়নের জন্য সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করা হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, পরিবেশ দক্ষতা সূচক তৈরির পর প্রথম বছরকে 'বেইস ইয়ার' হিসেবে ধরা হবে।

স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং প্রণয়ন সম্পর্কে সাবের হোসেন বলেন, `বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর মূল্য বাড়ল না কমল, তা জানার জন্য এটি করা হবে।'

 এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শব্দ দূষণরোধে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও প্রস্তুত নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, রেজাউল করিম বাবলু এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

2h ago