বছরে ১৫ মেট্রিক টন অপচনশীল বর্জ্য সাগরে ফেলছেন পটুয়াখালীর জেলেরা: গবেষণা

প্লাস্টিক দূষণ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মহিপুর মৎস অবতরণ কেন্দ্রের কাছে খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে জেলেদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক দ্রব্য ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর জেলেরা প্রতি বছর এককভাবে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন অপচনশীল বর্জ্য সাগরে ফেলছেন।

বেসরকারি সংস্থা ইকোফিশের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বর্জ্যের মধ্যে আছে প্লাস্টিকব্যাগ, বোতল, পলিথিন, বিস্কুটের প্যাকেট ও সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারে ব্যবহৃত খাবার বহনের প্যাকেট।

পরিবেশ, মৎস্যজীবী ও উপকূল নিয়ে কাজ করা এই সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন আলীপুর ও মহিপুর নামের দুটি ফিশ ল্যান্ডিং স্টেশনের জেলেদের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।

সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

প্লাস্টিক দূষণ
একেকটি ট্রলার সারাবছর ১৫টি ট্রিপে প্রায় সাড়ে ৩৭ কেজি বর্জ্য সাগরে ফেলে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জন্য ও মাছের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে বছরের ৭ মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। বাকি ৫ মাস জেলেরা মাছ ধরতে পারেন।

ইকোফিশের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এই পাঁচ মাসে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪০০ ট্রলার মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে যায়। প্রতিটি ট্রলারে ১২ থেকে ২০ জেলে থাকেন এবং প্রতি ট্রিপে একেকটি ট্রলারকে তিন দিন থেকে প্রায় এক সপ্তাহ সমুদ্রে থাকতে হয়।

এই মেয়াদে একেকটি ট্রলার গড়ে ১৫টি ট্রিপ দিতে পারে। প্রতি ট্রিপে জেলেরা তাদের সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, পলিথিন, বিস্কুট ও খাবারের প্যাকেটসহ আড়াই কেজি ওজনের প্লাস্টিক নিয়ে যান। ব্যবহারের পর এর প্রায় পুরোটা তারা সাগরে ফেলে দেন।

এই হিসাব অনুসারে এটা অনুমান করা যায় যে, একেকটি ট্রলার সারাবছর ১৫টি ট্রিপে প্রায় সাড়ে ৩৭ কেজি বর্জ্য সাগরে ফেলে।

ইকোফিশের গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বেঁচে থাকার জন সমুদ্রকে দূষণমুক্ত রাখার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। সমুদ্রের পরিবেশ দূষণমুক্ত না রাখতে পারলে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।'

প্লাস্টিক দূষণ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে জেলে ও পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক দ্রব্য ও পলিথিন সংগ্রহ করছেন ব্লুগার্ডের সদস্যরা। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ইকোফিশের গত এক বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যটক ও স্থানীয়রা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন ২২ কেজির বেশি অপচনশীল বর্জ্য ফেলেন।

সাগরিকার ভাষ্য, সমুদ্র ও সমুদ্র সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে ইকোফিশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কিছু জেলের মাঝে পাটের বস্তা বিতরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রাখতে তারা ২০ জন নারীসহ প্রায় ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, 'সমুদ্রে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল ও পলিথিন ফেলার বিরূপ প্রভাব আমরা বুঝতে পারছি। এখন আমরা আমাদের এলাকার সব জেলেকে এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে বলছি।'

পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, 'সমুদ্রদূষণ না করার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নেব।'

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank cuts reverse repo rate

No refund for notes bearing religious or political slogans: Bangladesh Bank

The banking regulator introduced the Bangladesh Bank Note Refund Regulations, 2025

5h ago