ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫: কী আছে এতে?

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল গভর্নেন্সের নতুন এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া এবং এখন গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা এই খসড়া অধ্যাদেশের লক্ষ্য হলো ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটা বা উপাত্ত ব্যবহারে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা।

খসড়া অধ্যাদেশটি এমন এক সময়ে করা হচ্ছে, যখন ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন পরিষেবা এবং আন্তঃসীমান্ত ডেটা আদান-প্রদান দ্রুত বেড়েছে, যা ডেটা গভর্নেন্সকে জাতীয় অগ্রাধিকারে পরিণত করেছে। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে এটি হবে বাংলাদেশের ডেটা সুরক্ষার প্রথম কোনো আইনি কাঠামো, যা জাতীয় নীতিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

বর্তমান বিশ্ব ডেটা-নির্ভর। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে বাংলাদেশ সরকার ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ করতে যাচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলো এখন দ্রুত গোপনীয়তা রক্ষার আইন প্রণয়নে ব্যস্ত, কারণ ডিজিটাল অর্থনীতি যেমন বিস্তৃত হচ্ছে, তেমনি নজরদারি ও উপাত্ত অপব্যবহারের ঝুঁকিও বাড়ছে।

ভারত দীর্ঘ বিতর্কের পর ২০২৩ সালে ডিজিটাল পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন আইন পাস করে। আর সিঙ্গাপুর ২০১২ সালেই নিজস্ব পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট কার্যকর করে। এ ছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নাইজেরিয়া এরইমধ্যে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করেছে। বিশ্বজুড়ে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনকেই (জিডিপিআর) আদর্শ হিসেবে ধরা হয়, যা বৈশ্বিকভাবেই বড় প্রভাব রাখছে।
 
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডিজিটাল কার্যক্রম দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন এবং ই–কমার্স পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর বিস্তৃতি। কিন্তু একীভূত ডেটা সুরক্ষা আইন না থাকায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত উপাত্ত-উপাত্ত ফাঁস বা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ এতদিন সীমিত ছিল। এই অধ্যাদেশ সেই দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান আনতে যাচ্ছে। অর্থাৎ উপাত্ত-উপাত্তের গোপনীয়তাকে ব্যক্তির মর্যাদা, নিরাপত্তা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

এ ধরনের একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো ছাড়া বাংলাদেশ শুধু নাগরিকদের উপাত্ত সুরক্ষায় পিছিয়ে পড়ত না, বরং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর ঝুঁকিতেও থাকত। কারণ, তারা এখন আন্তর্জাতিক মানের গোপনীয়তা নীতির অনুসরণকে অপরিহার্য বলে মনে করে। 

এই অধ্যাদেশ কেবল ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য, ক্লাউড কম্পিউটিং ও ফিনটেক পার্টনারশিপের মতো খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পথও উন্মুক্ত করবে, যেখানে শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ব্যবসার পূর্বশর্তে পরিণত হয়েছে।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের পরিধি

অধ্যাদেশের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল সিস্টেমের ওপর আস্থা বজায় রাখার জন্য ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা, অখণ্ডতা এবং সুরক্ষা অপরিহার্য। অধ্যাদেশ অনুসারে, ব্যক্তিগত উপাত্ত বলতে এমন উপাত্তগুলোকে বোঝায়, যা একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে- যার মধ্যে রয়েছে নাম, ঠিকানা, আর্থিক উপাত্ত, অবস্থান, স্বাস্থ্য বিবরণ, জেনেটিক ও বায়োমেট্রিক উপাত্ত এবং অন্যান্য উপাত্ত।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণকারী এবং বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের উপাত্ত পরিচালনাকারী সব সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটি সরকারি সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ এবং যেকোনো ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ বা প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

অধ্যাদেশটি সাংবিধানিক অধিকার, জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থের সঙ্গে ডেটা সুরক্ষাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তাকেও স্বীকৃতি দেয়। এই অধ্যাদেশ আরও স্বীকার করে যে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অথবা আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় প্রযোজ্য হতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আনুপাতিক এবং প্রয়োজনীয়।

প্রধান কয়েকটি সংজ্ঞা

এই অধ্যাদেশ উপাত্ত সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শব্দকে সংজ্ঞায়িত করে। উপাত্ত-জিম্মাদারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে— কোনো ব্যক্তি যিনি, একক বা যৌথভাবে, কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়া করেন বা এই উদ্দেশ্যে  তা তত্ত্বাবধান করেন বা ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেন।

অন্যদিকে একজন ডেটা প্রক্রিয়াকারী ব্যক্তিকে এমন যেকোনো ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি উপাত্ত-জিম্মাদারের পক্ষে  ব্যক্তিগত উপাত্ত-উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করেন।
এই অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ এমন উপাত্ত জিম্মাদার সম্পর্কেও ধারণা দেয়, যাদের কার্যকলাপ জাতীয় সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বা জননিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই সত্তাগুলো তাদের সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতা এবং তদারকির অধীন।

সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্তকে বায়োমেট্রিক্স, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যপদ, যৌন অভিমুখিতা, স্বাস্থ্য, আইনি বিষয় এবং ভূ-অবস্থান সম্পর্কিত উপাত্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধরনের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য স্পষ্ট সম্মতি এবং উচ্চতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।

ডেটা সাবজেক্ট বা উপাত্তধারী হলেন সেই ব্যক্তি, যার উপাত্তটি প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে— অর্থাৎ, যার গোপনীয়তা ও অধিকার রক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

সম্মতি এবং আইনসম্মত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ অবশ্যই আইনসম্মত, ন্যায্য এবং স্বচ্ছ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। কারো ব্যক্তিগত উপাত্ত সংগ্রহ বা প্রক্রিয়াকরণের আগে তাকে জানাতে হবে এবং তার স্পষ্ট সম্মতি নিতে হবে। এই সম্মতি হতে হবে নির্দিষ্ট, স্বতঃসিদ্ধ এবং স্পষ্ট।

উপাত্তধারীদের জানানো বাধ্যতামূলক যে তাদের উপাত্ত কেন সংগ্রহ করা হচ্ছে, কীভাবে ব্যবহৃত হবে, কে এটি ব্যবহার করবে, এবং কতদিন সংরক্ষণ করা হবে। উপাত্ত কেবলমাত্র বৈধ উদ্দেশ্যে এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রক্রিয়াকরণ হতে পারে। এই অধ্যাদেশ বর্ণিত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন উপাত্ত সংগ্রহের অনুমতি দেয় না। উপাত্ত সংরক্ষণ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় তাদের সম্মতি প্রত্যাহার করতে পারেন, এবং একবার সম্মতি প্রত্যাহার করলে ডেটা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ করতে হবে। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। 

অধ্যাদেশটি এমন পরিস্থিতির রূপরেখা দেয়, যার অধীনে স্পষ্ট সম্মতি ছাড়াই ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়া করা যেতে পারে। এর মধ্যে জনস্বার্থ, আইনি বাধ্যবাধকতা, চুক্তিভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা বা জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

 শিশু ও সংবেদনশীল ব্যক্তিদের উপাত্ত সুরক্ষা

এই অধ্যাদেশ শিশু এবং সেই ব্যক্তিদের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যারা সম্মতি জানাতে অক্ষম। এ ধরনের ক্ষেত্রে, পিতামাতা বা আইনি অভিভাবকের কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে।

নতুন অধ্যাদেশ সুস্পষ্টভাবে শিশুদের প্রতি প্রোফাইলিং (তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকরণ), আচরণগত নজরদারি বা লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে, কারণ এসব ডিজিটাল শোষণের সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া শিশুদের তথ্যের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণও সীমিত করা হয়েছে, যেন কোনো ধরনের প্রভাব বা পক্ষপাত সৃষ্টি না হয়। এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের শিশু উপাত্ত সুরক্ষা মানকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে, যেমন— ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপিআর ও ইউনিসেফ প্রণীত শিশুদের ডিজিটাল অধিকার সম্পর্কিত বৈশ্বিক নীতি।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো: জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি (এনডিজিএ)

আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশে জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি (এনডিজিএ) প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর ধারা ৮-এর অধীনে গঠিত হবে। এই স্বাধীন সংস্থা সম্মতি পর্যবেক্ষণ, নির্দেশিকা জারি, তদন্ত পরিচালনা এবং অভিযোগ দেখভালের দায়িত্ব পাবে।

অথরিটির দায়িত্ব হবে উপাত্ত জিম্মাদারদের নিবন্ধন ও শ্রেণীবিন্যাস করা, নিরীক্ষা পরিচালনা করা এবং নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ করা। এ ছাড়া এটি বিভিন্ন খাতের জন্য নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতির কোড তৈরি এবং উপাত্ত সুরক্ষা নীতির বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে পারবে।

আইনি বিষয়

অধ্যাদেশের নবম অধ্যায়ে ব্যক্তিগত উপাত্ত অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কিছু দণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। এতে ব্যক্তিগত উপাত্ত অননুমোদিত সংগ্রহ, ব্যবহার, হস্তক্ষেপ, আহরণ, বা প্রকাশ, সেইসঙ্গে উপাত্ত কর্তৃপক্ষ বা আদালত কর্তৃক জারি করা আদেশ অমান্য করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

এই ধারার অধীনে, দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড হতে পারে। অপরাধের পরিমাণ অনুযায়ী, কারাদণ্ডের সময় এবং জরিমানার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

এতে করপোরেট সংস্থাগুলোকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। যদি কোনো কোম্পানি এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো অপরাধ করে, তবে পরিচালক, ব্যবস্থাপক বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন, যদি না তারা প্রমাণ করতে পারেন যে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। এর সঙ্গে যদি কেউ উপাত্ত সংক্রান্ত অপরাধে সহায়তা, অনুমোদন বা উৎসাহিত করে তাকে সহ-অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং একইভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।

এই ধারা অধ্যাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রয়োগ হাতিয়ারগুলোর মধ্যে একটি, যা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে ডেটা অপব্যবহার বা অবহেলার সরাসরি আইনি ঝুঁকি রয়েছে।

আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত উপাত্তের কোনো লঙ্ঘন বা ডেটা ব্রিচ ঘটলে তা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং নেওয়া প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর অধীনে একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল শুনবে। নতুন অধ্যাদেশ অনুসারে, ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত করবে যে বিরোধগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং আইনি ও পদ্ধতিগত ন্যায্যতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে।

আন্তঃসীমান্ত ডেটা স্থানান্তর এবং সার্বভৌমত্ব

বিশ্বব্যাপী ডেটার প্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাদেশে আন্তঃসীমান্ত ডেটা স্থানান্তরের শর্তাবলীও নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উপাত্ত শুধুমাত্র তখনই বাংলাদেশ থেকে বাইরে স্থানান্তর করা যাবে, যদি গ্রহীতা দেশ বা প্রতিষ্ঠান একই সুরক্ষা মান নিশ্চিত করতে পারে।

তবে নতুন অধ্যাদেশে 'সমমানের সুরক্ষা'র বিষয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এর বোধগম্য কারণ, প্রযুক্তি জগতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এবং সাইবারসিকিউরিটি প্র্যাকটিসও সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে।

আন্তঃসীমান্ত বিধিগুলো বাংলাদেশি নাগরিকদের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। দেশে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছেই। আইন প্রয়োগ বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য উপাত্ত স্থানান্তর সর্বদা আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে হতে হবে।

এই ধারা বাংলাদেশের উপাত্ত সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে এবং একইসঙ্গে দেশকে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল বাণিজ্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে কার্যকরভাবে সংযুক্ত করার সুযোগও দেয়।

বাস্তবায়নের সময়সীমা

নতুন নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ব্যাংকগুলোর সময় লাগবে, তাই ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর কিছু ধারা সরকারি গেজেট প্রকাশের ১৮ মাস পর কার্যকর হবে। এই সময়ে সংস্থাগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে নতুন আইনের সঙ্গে মানিয়ে নেবে।

এনডিজিএ এই রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য বিস্তারিত প্রবিধান, সম্মতি কোড এবং প্রযুক্তিগত মান জারি করবে। কোম্পানি এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের সম্মতি প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করতে হবে, ডেটা সুরক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো শক্তিশালী করতে হবে এবং দায়িত্বশীল ডেটা পরিচালনায় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

গ্রেস পিরিয়ডের পরও নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত প্রশাসনিক জরিমানা, জরিমানা বা অন্যান্য প্রয়োগকারী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অধ্যাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অ্যালগরিদমিক জবাবদিহি সম্পর্কে খুব কম উল্লেখ আছে। মনে করা হচ্ছে এই বছরের শেষের দিকে প্রকাশিত এআই নীতির সঙ্গে এটি উপস্থাপিত হবে।

এর তাৎপর্য এবং প্রত্যাশিত প্রভাব

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রবর্তন বাংলাদেশের ডিজিটাল গভর্নেন্সে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি অসংগত প্রথাগুলোকে প্রতিস্থাপন করে একটি একীভূত, অধিকারভিত্তিক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে, যা ডেটা গোপনীয়তাকে জাতীয় এবং ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করে।

এটি ডেটা জবাবদিহিতার জন্য একটি আইনি ভিত্তি তৈরি করে, এই অধ্যাদেশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বাড়াবে, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি ভারত, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের মতো বিস্তৃত ডেটা সুরক্ষা আইন অনুসরণকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশকে স্থান দেবে।

কাগজে কলমে এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যাপক গোপনীয়তা সুরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু বাস্তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে এটি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং রাষ্ট্র নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারের সঙ্গে নিরাপত্তা স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে কি না, তার ওপর।

Comments

The Daily Star  | English
Women in July uprising

The unfinished revolution for women's political rights

Post-uprising women were expected to play central role in policymaking, which did not happen.

7h ago