বাড়ছে চালের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আমন ফসল কাটার এক মাস আগে এসে গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে চালের দাম কেজিতে এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৬৫-৮০ টাকা কেজি দরে। আর মোটা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৬ টাকায়, যার দর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ টাকা।

পাইকারদের দাবি, বিভিন্ন জেলার চালকল মালিকরা বেশি দাম আদায় করছেন। আর মিলারদের ভাষ্য, ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা চালের দাম বেশি রাখছেন।

ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনো কম। সাধারণত আমন ফসল কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের দাম বেশি থাকে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আব্বাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্বাস উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মিলারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত চাল আসছে না।

'দাম বাড়তে শুরু করলে বড় ব্যবসায়ীরা চাল মজুত করার চেষ্টা করেন। এর ফলে দাম আরও বেড়ে যায়', বলেন তিনি।

আব্বাস উদ্দিন আরও বলেন, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ এর মতো মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তা গতকাল দুই হাজার ৫৫০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যার দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল দুই হাজার ৪২০ থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা।

মিনিকেট, নাজিরশাল ও গুটি স্বর্ণা চালের দামও কেজিতে এক টাকা বেড়েছে বলে জানান আব্বাস।

কারওয়ান বাজারের মতলব রাইস এজেন্সির মালিক খুচরা বিক্রেতা আবু রায়হান জগলু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা জানি না কেন দাম বাড়ছে। আমরা শুনেছি সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। তবুও দাম বাড়ছে।'

তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা বাজার মনিটরিং প্রতিবেদনে এই মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চালের পাইকারি দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা এবং খুচরা দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি।

দক্ষিণ বেগুনবাড়ীর খুচরা দোকান আনোয়ার স্টোরের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগেও তিনি প্রতি বস্তা বিআর-২৮ চাল দুই হাজার ৪০০ টাকায় কিনতেন। তিনি এখন ৫৬ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছেন, যা গত সপ্তাহের চেয়ে দুই টাকা বেশি।

রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরের বাসিন্দা দিনমজুর হাবির মিয়া (৪৫) জানান, তিনি ও তার গার্মেন্টসকর্মী স্ত্রী দিনের বেলায় বাসায় না থাকায় ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য ভর্তুকি মূল্যে (৩০ টাকা কেজি) টিসিবির ট্রাক থেকে চাল কিনতে পারছেন না।

চার সন্তানের বাবা হাবির জানান, চালের দাম কেজিতে এক টাকা বাড়লেও সেটার প্রভাব তাদের দৈনন্দিন খরচের ওপর পড়ে।

দিনাজপুর শহরের বাহাদুরবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টারকে জানান, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দিন আগে থেকে মিলাররা প্রতি ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া শুরু করেন।

বাহাদুরবাজার ও রেলবাজারহাটের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন আগে মিলারদের কাছ থেকে বিআর-২৮ চালের বস্তা দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা, বিআর-২৯ চাল দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকা, গুটি স্বর্ণা দুই হাজার ১০০ টাকা ও মিনিকেট দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৮৫০ টাকায় কিনেছেন।

অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ধানের সরবরাহ সংকটের কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম ততটা বাড়েনি।

তিনি আরও বলেন, দেশে উৎপাদিত মোটা চালের বেশিরভাগই সরকার কিনে নানা ধরনের সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের কাছে সরবরাহ করে থাকে।

'এ কারণে আমন ফসল কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে এটাই প্রধান কারণ', বলেন লায়েক আলী।

এর পেছনে আরেকটি সম্ভাব্য কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কার মধ্যে শহরের মানুষ এখন মজুত করার জন্য আরও চাল কিনছেন। এটিও দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

2h ago