ইবনে সিনায় সিজারের পর নারীর মৃত্যু, অবহেলার অভিযোগ পরিবারের

পলি সাহা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর ২৬ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে।

স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলি সাহা (২৬) নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এসব অভিযোগ করেন পলি সাহার স্বামী আসিফ রায় ও তার স্বজনরা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পলিকে মৃত ঘোষণা করে।

স্বজনরা জানায়, গত সোমবার দুপুরে প্রসবজনিত অস্ত্রোপচার করাতে পলি সাহাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করান তার স্বামী।

পেশায় ফার্মাসিস্ট আসিফ বলেন, 'সোমবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে পলির সিজারিয়ান অপারেশন হয়। এরপর চিকিৎসক জানান, মা ও নবজাতক উভয়েই ভালো আছে। বিকেল ৫টার দিকে তাকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নেওয়া হয়। তখনো চিকিৎসকরা জানান, পলি ভালো আছে, তবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।'

'এরপর বিকেলে চিকিৎসকরা জানান, পলির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলির অবস্থা খুবই খারাপ। সে অক্সিজেন পাচ্ছিল না, তার হার্টবিটও পাওয়া যাচ্ছিল না। সে অবস্থায় আবারও তার করে সার্জারি করা হয়।'

তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ধাপে পলির অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়, যেটা চিকিৎসকরা প্রথমে আমাদের জানায়নি। চিকিৎসকরা জানান—রোগীর জরায়ু কাজ করছে না, এজন্য ব্লিডিং হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। আমি সম্মতি দিলে অস্ত্রোপচার করা হয়।

'সোমবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা জানায়—রোগীর ব্লিডিং কমেছে, কোনো শঙ্কা নেই। তবে ব্লাড প্রেশারটাও অনেক কমছে। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পর পলির সঙ্গে যখন আমরা কথা হয়, তখন সে জানায়, তার অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অস্থির লাগছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের এগুলো জানাতেই তারা জানায়, রক্তক্ষরণ কমে গেছে, ব্লাড প্রেশার নিয়ে তারা চিন্তিত। এরপর সোমবার রাতে আমাকে আর পলির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।'

আসিফ বলেন, মঙ্গলবার ভোর চারটায় আমাকে জানানো হয়, পলির অবস্থা খুব খারাপ। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেল চারটায় পলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

'মঙ্গলবার সারা দিন চিকিৎসকরা পলির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানায়নি। আমি চিকিৎসককে ২০ বারের বেশি ফোন করেছি। তারা কিছু জানায়নি। দুপুর ১টায় আমাকে জানায়—রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, চিকিৎসকদের আর কিছুই করার নেই।'

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ জানিয়ে আসিফ রায় বলেন, পলির ‍দুটি অস্ত্রোপচারেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসকরা এটা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। তার বুকে ব্যথা ছিল, ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছিল, এগুলোর জন্যও স্টেপ নেয়নি চিকিৎসকরা। প্রত্যেক জায়গায় গাফিলতি ছিল, তারা কেয়ার করেনি।

পলির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. শারমিন মাহমুদ। বিষয়টি নিয়ে জানতে ডা. শারমিন মাহমুদের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠালেও জবাব দেননি।

পলির স্বজনদের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবনে সিনা ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নূরে আলম সবুজ ডেইলি স্টারকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিতে পলি সাহার জন্য যে ট্রিটমেন্ট প্রসিডিউর মানা হয়েছে, তা তাকে ও পলির স্বজনদের জানিয়েই করা হয়। প্রত্যেক ধাপে রোগী ও স্বজনদের সম্মতি ছিল।

নূরে আলম সবুজ জানান, চিকিৎসায় কোনো অবহেলা আছে কি না, তা জানতে ইতোমধ্যেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

17h ago