সিরিয়াকে ‘মুক্তি দিলেন’ ট্রাম্প

হাত মেলাচ্ছেন সিরিয়ার শাসক আল-শারা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হাত মেলাচ্ছেন সিরিয়ার শাসক আল-শারা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ার দীর্ঘদিনের একনায়ক বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকেই দেশটির সঙ্গে পশ্চিমের দেশগুলোর সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। এই ধারায় দেশটিকে সব ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে 'মুক্তি' দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

বিধিনিষেধ থেকে 'পুরোপুরি' মুক্ত সিরিয়া

গতকাল সোমবার সিরিয়ার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যতি টানেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আবারও যুক্ত করার উদ্দেশেই মূলত এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে, সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত মে মাসে সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন ট্রাম্প। এবার বাকি বিধিনিষেধগুলোও তুলে নিলেন তিনি।

২০০৪ সালে 'জাতীয় জরুরি পরিস্থিতির' কারণ দেখিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সিরিয়ার বিরুদ্ধে নানান ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেন। সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশটির বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান এসব বিধিনিষেধের আওতায় ছিল।

সাবেক ইসলামপন্থি গেরিলা যোদ্ধা আহমেদ আল-শারা সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের শাসনের অবসান ঘটানোর পর আঙ্কারা ও রিয়াদের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।

গতকালের নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প এই উদ্যোগ একেবারে 'বাতিল' করে দেন।

দামেস্ক-ওয়াশিংটনের নতুন সম্পর্ক

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, 'যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে চান ট্রাম্প। এটি সিরিয়ার স্থিতিশীলতা, ঐক্য ও অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে। এই উদ্যোগে ট্রাম্পের সেই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে।'

১৯৭৯ সাল থেকে সিরিয়াকে 'রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক' দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তকমা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সিরিয়ায় যেতে নিরুৎসাহিত করেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সিরিয়াকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন রুবিও। তবে এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লেগে যেতে পারে বলেও মত দেন ওই মার্কিন নেতা।

পাশাপাশি, ক্ষমতাচ্যুত বাশার-আল আসাদের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) কে জঙ্গি সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন রুবিও। বর্তমান শাসক শারার জঙ্গি তকমা মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এক সময় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে এইচটিএস ও শারা'র সংশ্লিষ্টতা ছিল। ইতোমধ্যে আল-শারাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষিত পুরস্কার তুলে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

বিধিনিষেধের দায়িত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা ব্র্যাড স্মিথ। তিনি আশা করে বলেন, নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিরিয়ার 'আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকার দিন শেষ হয়েছে'।

তবে নির্বাহী আদেশে সাবেক সরকার ও পলাতক রাষ্ট্রপ্রধান বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে আরোপিত বিধিনিষেধ বাতিল করেননি ট্রাম্প।

সিরিয়ার জন্য 'যুগান্তকারী' ঘটনা

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এটি সিরিয়ার জন্য 'যুগান্তকারী ও বড় ঘটনা'।

সমাজমাধ্যম এক্সে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, 'অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় যে বাধা ছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, বহুল প্রত্যাশিত দেশ পুনর্নির্মাণ ও উন্নয়নের দরজাগুলো একের পর এক খুলে যাচ্ছে।'

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ফাইল ছবি: এএফপি
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ফাইল ছবি: এএফপি

'এবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া সিরীয়রা সম্মান নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবেন,' বলেন মন্তব্য করেন তিনি।

অপরদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার বলেছেন—তারা প্রতিবেশী লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে 'শান্তি ও সম্পর্ক স্বাভাবিক' করার চুক্তিতে যেতে আগ্রহী।

২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ইসরায়েল শান্তি ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আব্রাহাম চুক্তির পরিসর বাড়াতে চায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

2h ago