এক্সপ্লেইনার

শুল্ক দিয়ে রাশিয়াকে কতটা বেকায়দায় ফেলতে পারবেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি না করলে রাশিয়ার ওপর একশ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে কিয়েভকে আরও অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ব্যাপারে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ট্রাম্পের 'লোকদেখানো হুমকিতে' মস্কো কর্ণপাত করছে না। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ট্রাম্পের 'অত্যন্ত গুরুতর' এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করতে রাশিয়া সময় নেবে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রয়োজন মনে করলে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।

গত সোমবার হোয়াইট হাউসে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পুতিনের ওপর হতাশ এবং বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানো হবে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের শহরগুলোতে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প। সোমবার তিনি বলেন, 'তার (পুতিনের) সঙ্গে আমার আলোচনা সবসময়ই খুব আনন্দদায়ক হয়… কিন্তু এরপরেই রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।'

ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'যদি ৫০ দিনের মধ্যে কোনো (যুদ্ধবিরতি) চুক্তি না হয়, তবে আমরা রাশিয়ার ওপর খুবই কঠোর শুল্ক আরোপ করব।'

ট্রাম্প আরও বলেন, রাশিয়ার রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক 'প্রায় ১০০ শতাংশ' হতে পারে এবং এরপর 'সেকেন্ডারি ট্যারিফ' বা শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুমকিও দেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যেসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করবে তাদের ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি আসলে কী?

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর ২১,৬৯২টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়ার জ্বালানির দাম বেঁধে দেওয়া এবং ইউরোপের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করা।

কিন্তু সেকেন্ডারি ট্যারিফের হুমকি কার্যকর হলে তা একটি বড় পরিবর্তন হবে। এখন পর্যন্ত রাশিয়াকে চীন ও ভারতের মতো প্রধান ক্রেতাদের কাছে জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রি করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান-- উভয় দলের আইনপ্রণেতারা 'স্যাংশনিং রাশিয়া অ্যাক্ট অব ২০২৫' নামে একটি বিল পাসের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যা রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস ক্রয়কারী অন্য দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে। এই বিলটি পাস হলে রাশিয়াকে সহায়তাকারী যেকোনো দেশের ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ক্ষমতা পাবেন ট্রাম্প।

তেল-গ্যাস রপ্তানির ওপর কতটা নির্ভরশীল রাশিয়ার অর্থনীতি?

জ্বালানি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ আয় করে রাশিয়া। সমুদ্রপথে তেল রপ্তানি থেকে আয় ২০২৪ সালে কিছুটা কমলেও তা প্রায় যুদ্ধ-পূর্ববর্তী পর্যায়েই রয়েছে। এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে জ্বালানি রপ্তানিতে সহায়তা করছে 'ছায়া নৌবহর' বা শ্যাডো ফ্লিট। এই জাহাজগুলোর মালিকানার তথ্য অস্বচ্ছ এবং বীমার ক্ষেত্রে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যা তাদের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সাহায্য করে।

২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার রপ্তানি করা মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় অর্ধেক কিনেছে চীন। এর পরেই রয়েছে ভারত। দেশটি প্রায় ৪০ শতাংশ রাশিয়ার তেল কিনেছে। উভয় দেশই প্রচুর পরিমাণে কয়লাও আমদানি করে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র নিজে রাশিয়ার ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে এর প্রভাব সামান্যই হবে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রপ্তানি ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার, যা রাশিয়ার মোট রপ্তানির মাত্র ০.৭ শতাংশ।

যদিও রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) তেল-গ্যাসের অবদান যুদ্ধ শুরুর বছরের তুলনায় কমেছে, তবু জ্বালানি রপ্তানির ওপর মস্কোর নির্ভরতা এখনও অনেক বেশি। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায়, রাশিয়ার রপ্তানি আয়ের ৫৫ শতাংশ এবং জিডিপির ১৬ শতাংশ (প্রায় ২৮০ বিলিয়ন ডলার) এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে।

সেকেন্ডারি ট্যারিফের ফলে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তেলের বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। রাশিয়া থেকে তেল রপ্তানি কমে গেলে যে সংকট তৈরি হবে সেটা ওপেক সামাল দিতে পারবে।

তবে ট্রাম্পের আশা থাকবে, অন্য দেশের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের আগেই রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় পৌছাতে পারবে ওয়াশিংটন।

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

4h ago