গভীর রাতে ট্রাম্পের ফোন পেয়েও কেটে দেন বিবিসির সাংবাদিক

হোয়াইট হাউস থেকে ফোন কল পেয়েও কেটে দেন বিবিসির সাংবাদিক গ্যারি ও'ডনোহিউ। গভীর রাতের সেই কল তাকে বিস্মিত করে। পরে জানেন, তাকে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দিতে ফোন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তড়িঘড়ি করে প্রস্তুত হয়ে সাক্ষাৎকার নেন ওই অভিজ্ঞ সাংবাদিক।
আজ মঙ্গলবার এই অভিনব ঘটনার বিষয়টি গ্যারি নিজেই বিবিসির প্রতিবেদনে জানিয়েছেন।
পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সময় রিপাবলিকান নেতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রাণনাশের চেষ্টা চালানো হয়। ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বিবিসির সাংবাদিক গ্যারি। টানা পাঁচ দিন চেষ্টা চালিয়েও সুবিধা করতে পারেননি।

অভিজ্ঞ এই সাংবাদিক গত বছর বিবিসির পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রাণনাশের সংবাদ লেখার দায়িত্বে ছিলেন।
সে সময় তার লেখা সংবাদ প্রতিবেদনগুলো আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা পায়। গ্যারি ভেবেছিলেন 'হয়তো ট্রাম্পও সেসব প্রতিবেদন পড়েছেন এবং এ কারণে তার সাক্ষাৎকার পাওয়া সহজ হবে।'
বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছে সহজে সাক্ষাৎকার দেন না ট্রাম্প।
গত রোববার সন্ধ্যায় গ্যারিকে জানানো হয়, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে ইতিবাচক বার্তা পাবেন তিনি।
তখন থেকে তিনি ও তার দলের অন্যান্যরা টেলিফোনে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত বাড়লেও সেই ফোন আর আসেনি।
'তবে এক পর্যায়ে আমি সাক্ষাৎকারের আশা ছেড়ে দেই। এর আগের কয়েক সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর সুযোগ পাইনি; পথেই থেকেছি বেশিরভাগ সময়। আমি খুবই ক্লান্ত ছিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, টের পাইনি,' বলেন তিনি।
'ঠিক তখনই ফোন বেজে ওঠে। আধা-ঘুম, আধা-জাগ্রত অবস্থায় ফোন ধরি।'
ফোনের স্পিকারে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিটের কণ্ঠ শুনি, 'হাই গ্যারি। আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আছেন। এখন (সাক্ষাৎকার) শুরু করুন।'
'আমি লিভিং রুমে ছুটে যাই। ডিজিটাল রেকর্ডারটি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে ভুল করে লাইন কেটে দিই। বিরল সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় মন খারাপ হলো। কিন্তু তারা আবারও কল করল। এরপর প্রায় ২০ মিনিট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বললাম।'
গ্যারি বলেন, 'পেনসিলভানিয়ার সেই কালো রাত, পুতিনকে নিয়ে তার হতাশা থেকে শুরু করে ন্যাটোর প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসা ও যুক্তরাজ্য নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানা বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।'
বিবিসির সাংবাদিক গ্যারি জানান, এটাই ছিল গত এক দশকে যুক্তরাজ্যের কুলীন সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বিশেষ সাক্ষাৎকার।

তিনি মন্তব্য করেন, সামনাসামনি বসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার তুলনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে আলাপ করতে বেশি পছন্দ করেন। তাই হঠাৎ হঠাৎ, অদ্ভুত সময়ে সাংবাদিকদের ফোন করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন ট্রাম্প।
গত সোমবার তার সঙ্গে ট্রাম্প ঠিক সেরকম আচরণই করেছেন বলে মত দেন গ্যারি।
উত্তর আমেরিকায় বিবিসির প্রধান সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছেন গ্যারি ও'ডনোহিউ।
জন্মগতভাবে অন্ধ এই সাংবাদিক ২১ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবিসিতে কাজ করছেন।
২০২১ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে তিনি তার অন্ধত্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি জানান, শ্রবণ দক্ষতা ও স্মৃতিশক্তিই তার সাংবাদিকতার মূল 'অস্ত্র'।
লিংকড-ইন প্রোফাইল বলা হয়েছে—গ্যারি ও'ডনোহিউ ১৯৯১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও আধুনিক ভাষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
Comments