ত্রাণপ্রত্যাশী ফিলিস্তিনিদের ওপর 'প্রাণী শিকারের' মতো নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি স্নাইপার

গাজার একটি বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছে আইডিএফের স্নাইপাররা। ফাইল ছবি: এএফপি
গাজার একটি বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছে আইডিএফের স্নাইপাররা। ফাইল ছবি: এএফপি

আবারো ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এবার নিরীহ ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় স্নাইপার রাইফেল ও ট্যাংক ব্যবহার হয়েছে। 

আজ রোববার গাজার নাগরিক সুরক্ষা দপ্তরের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

গাজায় চরম খাদ্য সঙ্কট

গাজায় খাদ্যাভাব চরম আকার ধারণ করেছে। নিরুপায় হয়ে ত্রাণের লাইনে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। প্রায় প্রতিদিনই বেশ কিছু ত্রাণপ্রত্যাশী ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হচ্ছেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে মাসের শেষভাগ থেকে শুরু করে এ মাসের শুরু পর্যন্ত ত্রাণ নিতে এসে অন্তত ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের অনেকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নিহত হয়েছেন।

গাজায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির নিয়ন্ত্রণভার ইসরায়েল-আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে গঠিত সংগঠন জিএইচএফের কাছে যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত এ ধরণের ঘটনা ঘটছে।

গাজায় ২৫ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের পর হাজারো ফিলিস্তিনি ভীড় জমান। ছবি: এএফপি (২০ জুন, ২০২৫)
গাজায় ২৫ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের পর হাজারো ফিলিস্তিনি ভীড় জমান। ছবি: এএফপি (২০ জুন, ২০২৫)

গাজার উত্তরাঞ্চলে ট্রাকে করে আসা ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসে অন্তত ৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন। অপরদিকে, দক্ষিণে রাফার কাছে গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) অপর এক ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিতে যেয়ে আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন।

একই জায়গায় ২৪ ঘণ্টা আগেও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

প্রাণী শিকারের মতো স্নাইপারের গুলি

গাজা সিটিতে কাশেম আবু খাতের (৩৬) জানান, তিনি এক ব্যাগ ময়দা সংগ্রহের জন্য দৌড়ে ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, হাজারো ক্ষুধার্ত ও বেপরোয়া মানুষ 'চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কিতে' ব্যস্ত।

'ট্যাংক থেকে নির্বিচারে গোলা বর্ষণ করা হচ্ছিল। ইসরায়েলি সেনারা স্নাইপার রাইফেল দিয়ে আমাদেরকে গুলি করে মারছিল। মনে হচ্ছিল, তারা জঙ্গলে প্রাণী শিকারে নেমেছে', যোগ করেন তিনি।

'আমার চোখের সামনে ১৫-২০ জন মানুষ নিহত হলেন। কেউ, কাউকে বাঁচাতে পারেনি।'

নাগরিক সুরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানান, নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

ইসরায়েলের অস্বীকার

যথারীতি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিহতের সংখ্যা মেনে নেয়নি এবং দাবি করেছে, তারা 'সতর্কতামূলক গুলি' ছুঁড়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, গাজা সিটির কাছে 'হাজারো' ফিলিস্তিনি জমায়েত হয়, যা তাদের প্রতি 'তাৎক্ষণিক হুমকি'। বস্তুত বেসামরিক, নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর পক্ষ থেকে আসা এই 'হুমকি' দূর করতেই গুলি চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েল।  

গাজার খান ইউনিসে স্ত্রী আসিয়া, সন্তান ইয়াহিয়া, মুসা ও ইব্রাহিমের জানাজা পড়ছেন মাগদি জাদাল্লাহ ও পাড়া প্রতিবেশীরা। তারা সবাই একই বাড়িতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ছবি: রয়টার্স (১০ জুলাই, ২০২৫)
গাজার খান ইউনিসে স্ত্রী আসিয়া, সন্তান ইয়াহিয়া, মুসা ও ইব্রাহিমের জানাজা পড়ছেন মাগদি জাদাল্লাহ ও পাড়া প্রতিবেশীরা। তারা সবাই একই বাড়িতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ছবি: রয়টার্স (১০ জুলাই, ২০২৫)

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নিন্দা

জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি জানায়, তাদের ২৫টি খাদ্যবাহী ট্রাকের বহর গাজা সিটির এসে পৌঁছানোর পর 'অসংখ্য বেসামরিক ক্ষুধার্ত মানুষের মুখোমুখি হয়'। এ সময় তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।

এর অল্প সময় আগে ইসরায়েলি তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে গাজায় প্রবেশ করে ট্রাকগুলো। 

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ত্রাণ নিতে আসা বেসামরিক মানুষের ওপর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, এ ধরণের কাজ 'একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

তিনি জানান, উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণেও ইসরায়েলিদের গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজাকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে আইডিএফ। ছবি: আইডিএফের ওয়েবসাইট
গাজাকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে আইডিএফ। ছবি: আইডিএফের ওয়েবসাইট

গাজায় গণমাধ্যমের প্রবেশে বিধিনিষেধ থাকায় এএফপি নিহতের সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। গাজার প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সংগঠনের হামলায় এক হাজার ২১৯ জন নিহত হন।

সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৮৯৫ ফিলিস্তিনি। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরায়েলের বৈঠক চলছে। তবে ওই উদ্যোগে অগ্রগতি নেই।

অপরদিকে, দেইর আল-বালাহ এলাকায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago