‘আমাকে একটা ফোন কল করতে হবে’

ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে 'শান্তির দূত' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় বিশ্বের বড় বড় সব সংঘাত বন্ধের অঙ্গীকার করেন।

শুধু মুখের কথাই নয়, কাজেও প্রমাণ দেন তিনি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাত যখন মাত্রই দানা বেঁধে উঠছিল, তখন এতে বাদ সাধেন তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান ট্রাম্প। এক ফোন কলেই বন্ধ হয় সেই সংঘাত।

তবে হঠাৎ করেই গত রোববার থেকে আবারও দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। 

আজ বুধবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার একটি ফোন কলেই বন্ধ হবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

ফোন কলে যুদ্ধ বন্ধ

গতকাল মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি সামরিক সংঘাত কূটনীতির মাধ্যমে বন্ধ করার দাবি করেন ট্রাম্প। এসব সংঘাতের ফিরিস্তি দেন ভক্তদের।

এরপর বলেন, 'এটা বলতে আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু এগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের সংঘাত আজ আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে।'

'আগামীকাল আমাকে একটা ফোন কল করতে হবে। আর আমার ধারণা, (কলের পর) তারা ব্যাপারটা (তাদের ভুল) বুঝতে পারবে', যোগ করেন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প।

সীমান্ত এলাকা থেকে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন কম্বোডিয়ার বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি
সীমান্ত এলাকা থেকে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন কম্বোডিয়ার বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি

ট্রাম্প আরও জানান, 'আর কে আছে এমন, যে বলতে পারে যে সে একটি ফোন কল করেই দুটি শক্তিশালী দেশের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবে?'

অক্টোবরে এশিয়া সফরের সময় কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ওই দুই দেশের নেতাদের পাশাপাশি ট্রাম্পও সই দেন।

থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সংঘাতের কেন্দ্রে আছে এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে থেকে চলমান সীমান্ত বিতর্ক। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনামলে ওই বিবাদ শুরু হয়। উভয় দেশই সীমান্ত অঞ্চলের কয়েকটি মন্দিরকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করে।

যেভাবে সংঘাত আবার শুরু হলো

৭ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে দুই দেশের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। কম্বোডিয়ার সেনারা থাই ভূখণ্ডে ঢুকে গুলি চালায়। এতে দুই থাই সেনা আহত হয়।

এরপর ৮ ডিসেম্বর সোমবার ভোর থেকে সীমান্ত এলাকার একাধিক অংশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এক থাই সেনা নিহত ও অপর আটজন আহত হন।

কম্বোডিয়ার বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড।

সীমান্ত এলাকা থেকে অসংখ্য থাই নাগরিককে সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে। ছবি: এএফপি
সীমান্ত এলাকা থেকে অসংখ্য থাই নাগরিককে সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে। ছবি: এএফপি

কম্বোডিয়া এসব ঘটনার দায় অস্বীকার করে।

স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কম্বোডিয়ার প্রিয়াহ ভিহিয়ার প্রদেশের সেনা স্থাপনায় হামলা চালায় থাইল্যান্ড।ওই ঘটনায় কম্বোডিয়ার চার বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

সীমান্তবর্তী চার এলাকা থেকে তিন লাখ ৮৫ হাজার থাই বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় থাই কর্তৃপক্ষ। শুরুতে ৫০ হাজার মানুষ সরে যান। কম্বোডিয়াও এক হাজার ১৫৭টি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।

গতকাল ৯ ডিসেম্বর আরও কয়েকটি প্রদেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে এখন ছয়টি থাই প্রদেশে এবং কম্বোডিয়ার পাঁচ প্রদেশে সংঘাত চলছে।

সব মিলিয়ে কম্বোডিয়ায় সাত বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও ২০জন আহত হন।

পাশাপাশি তিন থাই সেনা নিহত ও সব মিলিয়ে ২৯ জন আহত হন।

আজ ১০ ডিসেম্বর সকালেও অব্যাহত ছিল সংঘাত। সব মিলিয়ে এই সংঘাতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।

ট্রাম্পের 'ফোন কল' থেকে কি ফল আসে, এখন সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments