যে কারণে পুরস্কার নিতে যাচ্ছেন না শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদো

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ফাইল ছবি: এএফপি
শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ফাইল ছবি: এএফপি

বেশ কিছুদিন ধরেই এ বছরের শান্তিতে নোবেলজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। তিনি অসলো এসে সশরীরে নোবেল গ্রহণ করবেন, এমন গুজব শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, আজকের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না মাচাদো।

মাচাদোর পক্ষে পুরষ্কার গ্রহণ করবেন তার মেয়ে আনা কোরিনা।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

গত বছরের আগস্টে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়ার পর মাচাদোকে একবারই জনসম্মুখে দেখা গেছে।

ভেনেজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর পর তাকে নির্বাসনে যেতে হয়।

ইতোমধ্যে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো দেশ ছেড়ে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে গেলে তাকে 'পলাতক' আসামী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, এমন আশংকা আছে।

আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় এই অনুষ্ঠান শুরুর কথা রয়েছে। মাচাদো আদৌ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়টি নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধোঁয়াশা ছিল।

মাচাদোর সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি: এএফপি
মাচাদোর সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি: এএফপি

অবশেষে নোবেল ইন্সটিটিউটের মুখপাত্র এরিক আশহেইম এএফপিকে নিশ্চিত করেন, আসছেন না মাচাদো।

নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভাইকেন নরওয়ের এনআরকে রেডিওকে বলেন, 'মায়ের প্রতিনিধি হিসেবে মেয়ে আনা কোরিনা মাচাদো পুরষ্কার গ্রহণ করবেন। তবে তিনি মারিয়া কোরিনার লেখা বক্তব্য পড়ে শোনাবেন।'

হার্পভাইকেন জানান, মাচাদো কোথায় আছেন সে বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য নেই।

সিটি হলে অনুষ্ঠিতব্য পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই ও লাতিন আমেরিকার আরও কয়েকটি দেশের নেতারা অসলো এসেছেন।

মাচাদোর মা ও তিন সন্তানও সেখানে থাকছেন।

পলাতক মাচাদো

আয়োজকরা এর আগে আভাস দিয়েছিলেন, পুরষ্কার নিতে সশরীরে হাজির হবেন মাচাদো।

তবে প্রথাগতভাবে নোবেলজয়ীদের সঙ্গে আয়োজিত সংবাদসম্মেলন শুরুতে বিলম্বিত ও পরে বাতিল হয়। যার ফলে মাচাদোর না আসার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়।

মাদুরোর বিরুদ্ধে কারচুপি করে ২০২৪ সালের নির্বাচন জেতার অভিযোগ এনেছেন বিরোধী দলের নেতা মাচাদো।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের অনেক দেশও ওই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মাচাদোর পাশে দাঁড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় আকারে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে কারাকাসের ওপর চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

ওয়াশিংটনের দাবি, নৌযানের মাধ্যমে কারাকাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার হয়। ওই কার্যক্রমে রাশ টেনে ধরতেই এই আয়োজন। 

তবে মাদুরোর দাবি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে সরকার থেকে উৎখাত করে মাচাদোকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চান।

গত মাসে ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক উইলিয়াম সাব হুঁশিয়ারি দেন, মাচাদো যদি পুরস্কার নিতে নরওয়ে যান, তাহলে তাকে 'পলাতক' আসামী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এএফপিকে সাব বলেন, 'তার বিরুদ্ধে অসংখ্য ফৌজদারি অপরাধ অভিযোগ আছে। সেগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভেনেজুয়েলার বাইরে গেলে তাকে পলাতক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।'

মাচাদোর বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র, ঘৃণা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসের' অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

হার্পভাইকেন গত সপ্তাহে বলেন, 'শান্তি পুরষ্কারের ইতিহাসে এরকম ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে, যখন পুরস্কার বিজেতাকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। সেসব ক্ষেত্রে পুরস্কারজয়ীর পরিবারের সদস্যরা তার প্রতিনিধি হিসবে তা গ্রহণ করেন ও বক্তব্য দেন।'

মাচাদো অসলো থেকে কীভাবে ভেনেজুয়েলা ফিরবেন, সে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনেডিক্ট বুল বলেন, 'দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি রয়েছে। এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ মাচাদো প্রসঙ্গে নমনীয়তা দেখিয়েছে। কারণ তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি স্পর্শকাতর।'

তিনি আরও বলেন, 'মাচাদো বিরোধীদলের অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু দীর্ঘ সময় নির্বাসনে থাকলে বিষয়টি আর এরকম থাকবে না। তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব হারাতে শুরু করবেন।'

ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ায় অনেকেই মাচাদোর প্রশংসা করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অতিরিক্ত খাতির দেখানোর কারণে সমালোচিতও হয়েছেন এই লাতিন আমেরিকান নেতা।

উল্লেখ্য, নিজের নোবেল পুরস্কারটি ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন মাচাদো।

 

Comments

The Daily Star  | English

Crowds gather at Manik Mia Avenue ahead of Osman Hadi’s Janaza

Army, police and Rab deploy heightened security as hundreds gather near Parliament complex

1h ago