যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভিসামুক্ত’ ভ্রমণেও ৫ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ভিসা

যুক্তরাষ্ট্রে 'ভিসামুক্ত' ভ্রমণে গেলেও বিদেশি পর্যটকদের ৫ বছরের সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য যাচাই করার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের (সিবিপি) নতুন প্রস্তাবে এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়।

সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিসা ওয়েইভার প্রোগ্রাম বা 'ভিসামুক্ত ভ্রমণ কর্মসূচি'র আওতায় এখন যারা ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ দিনের জন্য ভ্রমণ করতে পারেন, এমন ৪২টি দেশের নাগরিকরা এই নতুন নীতির অন্তর্ভূক্ত হবে বলে জানিয়েছে সিবিপি।

বর্তমানে এসব দেশের নাগরিকরা শুধু ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন (ইএসটিএ) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ৪০ ডলার ফি দিয়ে ইমেইল, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও জরুরি যোগাযোগের তথ্য দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় ভ্রমণের অনুমতির মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে।

সিবিপি জানিয়েছে, শিগগির যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর নাগরিকদের ৫ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ইতিহাস পর্যালোচনা করা হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের একটি দীর্ঘ তালিকা চাইবে সিবিপি। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট, গত দশ বছরের ইমেইল ঠিকানা এবং পরিবারের সদস্যদের নাম, জন্ম তারিখ, বাসস্থান, জন্মস্থান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ দক্ষ বিদেশি কর্মী বা এইচ-ওয়ান বি ভিসা প্রার্থীদের জন্য আগে থেকেই কার্যকর করা হয়।

বিদেশি পর্যটকদের জন্য নতুন করে ২৫০ ডলার ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফিও নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

তবে ভিসা ওয়েইভার বা ভিসামুক্ত দেশের নাগরিকদের এই ফি দিতে হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে এই ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি'র ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। নভেম্বর মাসে ২০টিরও বেশি পর্যটন ও ভ্রমণ ব্যবসায় জড়িত সংস্থার জোট উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদপত্রে সই করেছে।

তাদের মতে, নতুন ফি অনেক আন্তর্জাতিক পর্যটককে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করবে। বিশেষ করে আগামী বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্টে আসা পর্যটকদের ওপর এর প্রভাব পড়বে বলে দাবি তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যটন ব্যবসায়ী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলেও সিবিপি এ সম্পর্কে পর্যটন ব্যবসায়ীদের আগে থেকে জানায়নি এবং প্রস্তাবটি পর্যালোচনার সুযোগও পাইনি আমরা।'

অভিবাসন আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফ্র্যাগোমেনের কর্মকর্তা বো কুপার এ ব্যাপারে সিবিপিকে সতর্ক করে বলেন, 'এই নীতি ধীরে ধীরে কার্যকর করা উচিত।'

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেবলমাত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মতো নির্দিষ্ট তথ্য যাচাই যেমন অনলাইনে দেয়া বক্তব্য শুনে কারো ভ্রমণ ভিসা বাতিল করা কতোখানি ঠিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বো কুপার।

নতুন নীতি নাগরিকদের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তৈরি করবে বলেও মনে করছেন ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করে 'ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন' এর সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি সোফিয়া কোপ।

এতে নির্দোষ ভ্রমণকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদেরও সমস্যা ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমোদন পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

NCP leader Jannat sought police protection a month before death

Repeated threats and harassment led her to file complaint in November

37m ago