পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও বন্ধ্যাত্ব

ছবি: সংগৃহীত

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জনিত রোগ। বিশ্বজুড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী এই সমস্যায় ভোগেন। এই রোগে ডিম্বাশয়ে অনেকগুলো সিস্ট হয় বলেই এর এমন নামকরণ।

নারীদের এই রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিন

ইশরাত জেরিন বলেন, নারীদের ডিম্বাণু তৈরি হয় এক ধরনের তরলপূর্ণ থলির ভেতর, যাকে বলে ফলিকল। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় তখন এই থলি ফেটে ডিম্বাণু বেড়িয়ে আসে। এই অবস্থাকে ওভ্যুলেশন বলে। পিসিওএস এই প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করে।

যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম আছে, সেই নারীদের ডিম্বাশয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পুরুষ হরমোন (এন্ড্রোজেন) নিঃসরণ করে। যার ফলে ডিম্বাণু পরিপক্ক হওয়ার পরও ফলিকল ফেটে যায় না এবং ডিম্বাণু বের হতে পারে না। এর ফলে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয় বা মাসিক একেবারেই হয় না।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম কেন হয়?

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের সঠিক কারণ জানা যায় না। কিন্তু চিকিৎসকরা ধারণা করেন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং বংশগত কারণ এ ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে নারীদের মা ও বোনের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম আছে তাদের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

নারীদের শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলেও পিসিওএস হতে পারে। বাড়তি এন্ড্রোজেন ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের হওয়া এবং এর বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদনের কারণেও শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যেতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের উপসর্গ

পিসিওএসের উপসর্গ শুরু হয় সাধারণত নারীদের মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকেই। তবে উপসর্গের ধরন এবং তীব্রতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণ যে উপসর্গ সবার মধ্যে দেখা যায় তা হলো অনিয়মিত মাসিক। অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো -

● মুখে, বুকে, পেটে, পেছনে বা পায়ের আঙুলে চুল গজানো

● ব্রন, তৈলাক্ত ত্বক বা খুশকি

● অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা পুরুষদের মতো টেকো ভাব বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া

● ঘাড়, হাত, স্তন বা উরুতে চামড়ায় গাঢ় বাদামি বা কালো দাগ। এটা বগলে বা পায়ের ভাঁজেও হতে পারে।

● স্তনের আকার ছোট হয়ে যাওয়া

● মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া

● বন্ধ্যাত্ব

● কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া

● ডায়াবেটিস

তবে এসব উপসর্গের অনেকগুলোই অনেকের নাও থাকতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও বন্ধ্যাত্ব

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমস্যাটি তখনই শনাক্ত হয় যখন তিনি সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করে অসফল হন। সারা বিশ্বে বন্ধ্যাত্বের জন্য এটাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়।

তবে কারও পিসিওএস থাকা মানে এই নয় যে তিনি কখনোই মা হতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে তারাও মা হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।

এ বিষয়টি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, পিসিওএস হলেই যে গর্ভধারণ করা যাবে না এ কথা ঠিক নয়। এ সমস্যাটি ধরা পড়লে আশাহত হওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের প্রতিকার

ডাক্তার ইশরাত জেরিন জানান, পিসিওএসের সমস্যায় অনেক চিকিৎসক জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর বিশেষ ফর্মুলা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। এই ২টি হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ কমিয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে।

পিসিওএসের আসলে সেইভাবে প্রতিকার নেই। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হরমোনের ভারসাম্য রাখার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ওজন কমিয়ে বিএমআই ২৫ এর নিচে রাখলে, ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটা কাটতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

4h ago