মঞ্চভীতি কাটাবেন যেভাবে

মঞ্চভীতি
ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চে দাঁড়ালে আচমকা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, পেটে অস্বস্তি বা কাঁপুনি অনুভব করা কিংবা হঠাৎ ব্যর্থতার ভয় এসে গ্রাস করা—এগুলো সবকিছুই নষ্ট করে দেয়। এই সমস্যা চারপাশে অনেক মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন অন্যেরা তাদের সমালোচনা করবেন। আর মঞ্চে যাদের কাজ করতে হয়, তাদের যেন এই ভয়টা একটু বেশিই থাকে। এই ভয়টার নাম হলো 'স্টেজ ফ্রাইট' বা মঞ্চভীতি, যার ফলে মানুষ মঞ্চে অনেক দর্শকের সামনে বিব্রত হওয়ার ভয়ে থাকেন। এই স্টেজ ফ্রাইট বা মঞ্চভীতি অনেক শিল্পীর জন্য একটা দুঃস্বপ্ন।

আমি সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল এনকাউন্টারস আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালের ভোকালস ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলাম। গান গাইতে ভালোবাসলেও, সবার সামনে মঞ্চে উঠে আমি সাধারণত ভীষণ নার্ভাস হয়ে যাই। তাই কোনোমতে মঞ্চ পরিবেশনার জন্য নিজেকে রাজি করাতে পারলেও মূল অনুষ্ঠানের আগের কটা দিন বেশ শঙ্কায় থাকি।

মঞ্চভীতি মানুষের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মঞ্চে পরিবেশনার ওপর এর প্রভাব পড়ে। এর ফলে নিখুঁতভাবে বারবার প্র্যাকটিসের পরেও স্টেজে দাঁড়িয়ে একটি গান বেসুরো শোনাতে পারে, কিংবা প্রেজেন্টেশনের সময় স্টেজে দাঁড়িয়ে একটা সাধারণ শব্দই তোতলানোর কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আশার কথা হলো, আমি শিখে ফেলেছি যে যথেষ্ট অনুশীলন ও প্রস্তুতি থাকলে এই উৎকণ্ঠাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এমনকি একে উত্তেজনা ও আনন্দের মুহূর্তে রূপান্তরিত করাও সম্ভব।

অনুশীলন

যদি জনসমক্ষে ভালোভাবে উপস্থাপন করার একটি নির্ভুল উপায় থাকে, তবে সেটি হলো অনুশীলন। নিজের উপস্থাপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে তা আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এবং অনিশ্চয়তা কমায়। দুবাইয়ের এই অনুষ্ঠানে আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের অধিকাংশেরই আমার মতো উদ্বেগ মোকাবিলার নিজস্ব সহজ কিছু উপায় রয়েছে।

দুবাইয়ের কণ্ঠশিল্পী সাজিনা মাঞ্জি বলেন, 'আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করি। এভাবে আমি আমার অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তি নিজেই দেখতে পারি এবং বুঝতে পারি কোনগুলো রাখা উচিত আর কোনগুলো বাদ দেওয়া উচিত।'

তরুণ এই শিল্পী মনে করেন, তার এই পদ্ধতি তার অস্বস্তি কমাতে এবং তার পারফরম্যান্সকে সহজ করে তুলতে সাহায্য করে। আরেকটি উপায় হচ্ছে নিজেকে রেকর্ড করা অথবা বন্ধু ও পরিবারের সামনে অনুশীলন করা। 
সবচেয়ে কার্যকর হলো নিজের পারফরম্যান্সের বিষয়বস্তু সম্পর্কে খুব ভালো জানা। কারণ যত বেশি আপনি আপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানবেন, অনুষ্ঠানের দিন তত কম ভুল করার সম্ভাবনা থাকবে।

বিশ্রামের পদ্ধতি

যখন শরীর ফাইট অর ফ্লাইট অবস্থায় থাকে, তখন ঘাম বেড়ে যায়, হাত কাঁপতে থাকে এবং মুখ শুকনো লাগে। গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস সেই স্নায়ুগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে, আর মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন শারীরিক চাপ কমিয়ে মানসিক স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

তবে মালয়েশিয়ার ১৭ বছর বয়সী হিপ-হপ নৃত্যশিল্পী ফরহাদ শামী বলেন, যদিও এই কৌশলগুলো মঞ্চভীতি কমাতে সহায়ক, তবে এগুলো কিন্তু অবশ্যই আগে থেকে অনুশীলন করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, তাড়াহুড়ো করে মঞ্চে ওঠার এক ঘণ্টা আগে কিন্তু এগুলো করা যায় না।

মানসিক প্রস্তুতি

যাদের তীব্র উদ্বেগ আছে, তাদের জন্য ২০ হাজার দর্শকের সামনে মঞ্চে পারফর্ম করা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মতো মনে হতে পারে। তবে ধাপে ধাপে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষ কিন্তু সহজেই এটা কাটিয়ে উঠতে পারে।

লিসবনের নৃত্যশিল্পী নুরিনা পিরানি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, তিনি কম মানুষের সামনে নিজে থেকেই পারফর্ম করতেন। নার্ভাস হলেও তিনি এটি করতেন। তার মতে, 'অল্প সময়ের অস্বস্তি খুব দ্রুতই ইতিবাচক অ্যাড্রেনালিনে রূপ নেয় আর এটি আপনাকে পারফরম্যান্সের শুরুর দিকের সেই কঠিন কয়েক মিনিট পার হতে সাহায্য করে।'

এরপর ধীরে ধীরে সামনের অগণিত প্রত্যাশামুখী দর্শকের মুখ দেখতে এবং করতালির শব্দ শুনতে শুনতে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এরপর বাকি সময় আপনার কাজ হলো সেই উষ্ণ উচ্ছ্বাস ধরে রাখা। নিজেকে সাহস দিন এবং নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনি এখানে থাকার যোগ্য বলেই আছেন।

কিছু পরামর্শ

নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে অন্যভাবে ভাবা খুবই জরুরি। আমি নিজেও এটি করেছি এবং আমি মনে করি এটি আসলেই কার্যকর। যখনই আমার মনে নেতিবাচক চিন্তা আসত, যেমন: 'আমি ভুল করব আর সবার সামনে লজ্জায় পড়ব', তখন সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে মনে করিয়ে দিতাম—'আমি এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানি, আমি পারব, আমি এর পেছনে অনেক শ্রম ও সময় দিয়েছি'। তাই ইতিবাচক চিন্তার দিকে মনোযোগ দিন, যেমন: 'আমি প্রস্তুত' এবং 'আমি সক্ষম'।

মনে রাখবেন, শ্রোতাদের কেউই আপনার পারফরম্যান্স আগে থেকে জানে না, তাই ছোটখাটো ভুল আসলে বেশিরভাগ সময় অদৃশ্যই থেকে যায়। নিজেই নিজের কোচ হোন এবং নিজেকে বলুন যে আপনি সেরা অবস্থানে আছেন, আপনি পারবেন আর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রবল, ধ্বনিত করতালির ঝড় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

6h ago