বিয়ে কেন ৭ বছরেই বেশি ভাঙে

বিয়ে কেন ভাঙে
ছবি: সংগৃহীত

বহু প্রেমের সম্পর্কেরই প্রধান পরিণতি বিয়ে। প্রেমের শুরু থেকে একটি নতুন সংসার শুরু করার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। সে স্বপ্ন পূরণও হয়। সবাই যে প্রেমের বিয়েতেই সুখী হন, তা নয়। অনেকেই অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের দিকে ঝোঁকেন অর্থাৎ পরিবার ও পরিচিতজনদের ঠিক করে দেওয়া মানুষকে বিয়ে করেন। কিন্তু প্রেমের হোক বা অ্যারেঞ্জড, সেই বিয়ে সবার ক্ষেত্রে শুরুর মতো সুন্দর চিরজীবনের জন্য থাকে না। অনেকের ডিভোর্সের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও যেতে হয়।

বিয়ে বা রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে 'সেভেন ইয়ার্স ইচ' বলে একটি কথা আছে। এই ধারণা অনুযায়ী, ৭ বছর কেটে গেলে সম্পর্কে ভাঙনের একটি বড় আশঙ্কা দেখা যায়। অনেক জুটিই এই বিষয়টি নিয়ে ভয়ে থাকেন। কিন্তু কেন? এই কারণ ও এর বিশ্লেষণগুলো নিয়েই এই লেখাটি।

সময়ের বদল

সময়ের কাঁটা কখনো যেন অর্থের দিক দিয়ে ঘড়ির কাঁটার চাইতেও বেশি জোরে চলে। তাই তো চেনা মানুষটিকেও এক সময় অচেনা মনে হতে শুরু হয়। দীর্ঘ সময় সঙ্গযাপনের ফলে নিজেদের মধ্যে এই একঘেয়েমি কিংবা ব্যক্তি হিসেবে মানুষের পরিবর্তনগুলো একটি সম্পর্কের ভিত কখনো কখনো নাড়িয়ে দিতে পারে। বিয়ের বেশ কয়েক বছর, নির্দিষ্টভাবে ৭ বছর পর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনেও এই কারণটি বড় ভূমিকা পালন করে।

প্রয়োজন পাল্টে যায়

সময় ও মানুষের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আরও যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়, তা হচ্ছে মানুষের চাহিদা। তা সে মানসিক, জৈবিক যাই হোক না কেন। এক ধরনের সম্পর্কে থাকতে থাকতে ব্যক্তির নিজস্বতার যে প্রয়োজন থাকে, সেই তাগিদ কমতে বা বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী যদি সঙ্গীটিরও একই রকম প্রয়োজন না থেকে থাকে, তখন সৃষ্টি হয় দূরত্ব, মনোমালিন্য। আর তা থেকেই একে অপরকে আর সঠিক সঙ্গী মনে না হওয়ার ভয়। এতটা সময় একসঙ্গে কাটানোর পরও তাই মনে হতে পারে, জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে না তো?

 

সংকটের সময়

বিয়ের ৭ থেকে ৮ বছরের মাথায় দম্পতির মধ্যে যেকোনো একজনের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং এর ফলে একে অন্যের সঙ্গে করে তোলা রুটিনমাফিক জীবনটি তাদের আর ভালো লাগে না। কারো কারো এও মনে হয় যে তারা এক ধরনের বাক্সবন্দী জীবনযাপন করছেন। আর এমন ভাবনা থেকেই আসে অন্য কোনো রোমাঞ্চের খোঁজ, অন্য কোনো অভিযানের ইচ্ছে। আর এর ফলেই আসে অন্য কোনোদিকে মন দেওয়ার মতো বিষয়।

অন্য দিকে মন দেওয়া

দুই পক্ষের সম্পর্কে কখনো কখনো তৃতীয়জনের আগমন ঘটতেই পারে এবং বিয়ে বা প্রেম যাই হোক না কেন সম্পর্ক যখন দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তখন নিজেদের মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসার একটি ঝুঁকি থাকে। এর ফলে অন্য যে কাউকে নিজের সঙ্গীর চেয়ে বেশি মনোযোগী, যত্নশীল এবং আকর্ষণীয়ও মনে হতে পারে। আর এতে করে সম্পর্কের ছোটখাটো সমস্যাকেও বড় মনে হয় এবং দুজনের মধ্যে ফাটল ধরার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। ৭ বছর যেহেতু দীর্ঘ একটি সময়, সেহেতু এই সময়ের পর এমনটা ঘটে থাকে।

সম্পর্ক নিয়ে আমাদের সবার মাঝেই থাকে আশার গল্প বোনা। তবে সে সম্পর্কের 'হানিমুন ফেজ' বা মধুর সময় কেটে গেলেই যে তিক্ততায় রূপ নেবে, এমন আশঙ্কার মানে নেই। প্রতিটি সম্পর্ক আলাদা, তাদের গল্পটাও ভিন্ন ভিন্ন। তাই কিছুটা দূরত্ব এলেই চূড়ান্ত বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত না নিয়েও চেষ্টা করা যায়, সম্পর্ককে আগের সুন্দর স্মৃতির ভিত্তিতে শুধরে নেওয়ার।

চাইলেই স্বপ্ন দেখা যায় আরও একবার এগিয়ে যাওয়ার। দুই পক্ষকে একসঙ্গে মিলে সম্পর্কের জন্য কাজ করতে হবে। একে অপরকে নিজেদের মতো করে সাহায্য করতে হবে, যাতে সম্পর্কের দায় শুধু একজনের উপর না এসে পড়ে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সম্ভব হলে সম্পর্কটিকে নতুনভাবে শুরুর সুযোগ থাকলে অবশ্যই সেটি কাজে লাগানো প্রয়োজন। অন্য কারো ৭ বছরে সম্পর্ক ভেঙে গেছে বলেই আপনারও ভাঙবে, এমনটা নয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh GDP growth vs employment

Economy expanded 50% in eight years, but jobs grew only 11%

Over the past eight years until fiscal year 2023-24, the country’s economy grew by more than 50 percent, painting a rosy picture of performance by major sectors, while the expansion did not translate into job creation.

12h ago