অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ থেকেই হতে পারে প্রেমের শুরু
আপনাদের কি 'রাব নে বানাদি জোড়ি' সিনেমাটির কথা মনে আছে? একদম সিদেসাধা, কেরানি গোছের একটি লোকের সঙ্গে বিয়ে হলো উচ্ছল মেজাজের, উড়ে বেড়ানো একটি মেয়ের—যার চোখে ঝলমল করে একটি রোমান্টিক জীবনের স্বপ্ন। লোকটিরও মনে স্বপ্নের অভাব নেই, কিন্তু প্রকাশ করতেই যত ভয়। এই দুজনের বিয়েটা যে প্রেমের ছিল না, বরং পরিস্থিতির জটিলতায় পড়েই হয়েছিল, সেকথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে পরের গল্পটাও সবারই জানা। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ কত নাটকীয় মোড়, এমনকি শাহরুখ খানের ডাবল ডোজের পর সে বিয়ে একটি বলিউডি ঘরানার প্রেমকাহিনীতে পরিণত হয়।
জীবন সিনেমা নয়, একথা অনেকেই অনেকবার বলেন। কিন্তু কথায় তো এ-ও আছে যে 'ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন'। তাই বাস্তব জীবনের গল্পে কী করে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ফিকে রান্নায় প্রেমের পাঁচফোড়ন দেওয়া যায়, এ নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করা যাক।
বিয়ের আগের 'ডেটিং'
বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে-পরে হদয় তো দুজনের মেলামেশায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে পরিবারের মানুষজনের হরহামেশা চলাফেরা। অনেকের মাঝে বসে দু-চোখ এক হলেও, ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় অনেক কথাই। সেই বলতে চাওয়া কথাগুলোকে নিজেদের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য হলেও আলাদা দেখা করা প্রয়োজন। তাই বিয়ের আগে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, একে অন্যকে নিয়ে ডেটে যান, কফি খান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে বেড়ান শহরের অলিতে-গলিতে। জেনে নিন একে অন্যের শুধু তালিকায় লেখা বায়োডাটা নয়, হাসি-ভয়, নিজের অনিরাপত্তা; এমন ছোটখাটো থেকে শুরু করে বড়সড় বিষয়গুলো জানার শুরুটা এভাবেই হতে পারে।
ভ্রমণ
একঘেয়ে রুটিনের বাইরে, চেনা-জানা পরিসর থেকে কিছুটা দূরে মানুষকে ভালোভাবে জানা যায়—এমন একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এই বিশ্বাসের ওপর ভরসা রেখেই তাই দুজনে একসঙ্গে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। ডে-ট্যুরের চেয়ে বেশি ভালো হয় হাওয়াবদল করে কয়েকদিনের ভ্রমণে বেরিয়ে গেলে। ভ্রমণে অনেকসময় ছোট থেকে বড় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। পাহাড় চড়া, কায়াকিং, তাঁবুতে রাত্রিযাপন ইত্যাদি রোমাঞ্চকর মুহূর্তে দুজন একে অন্যের কাছে আসার—একে অন্যের পাশে থাকার অনেক বেশি সুযোগ মেলে, যা কিনা দুজন অচেনা মানুষকেও করে তুলতে পারে নির্ভরযোগ্য সহযাত্রী।
'তোমার পাহাড় ভালো লাগে, না সমুদ্র?'
যেকোনো প্রণয় বা পরিণয়ের সম্পর্কের শুরুতে বহুদিন ধরে চলে আসা এই একটি প্রশ্ন খুব পরিচিত আমাদের সবার কাছেই। যদিও পাহাড়-সমুদ্রের এই বাইনারি আলাপেই যে থেমে থাকতে হবে, এমন কোনো নিয়ম কিন্তু নেই। তাই একে অপরের ভ্রমণের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে জানাশোনার মধ্য দিয়ে জেনে নিতে পারেন সেই মানুষটিকেও, যার সঙ্গে জীবন গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছে।
নিজেকে মেলে ধরুন
'আমি আমার স্ত্রীর প্রেমে পড়েছি'–তুর্কী সিনেমা 'মুজিজে'র (Mucize) এর এই বিখ্যাত সংলাপটি, সিনেমাটি না দেখে থাকলেও সামাজিক মাধ্যমের অলিতে-গলিতে নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে। এসব কল্পনার গল্প যদি নিজের জীবনেও আনতে চান, তবে প্রেমে পড়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিজেকে বারবার মেলে ধরতে হবে সঙ্গীর কাছে। ঠিক একইভাবে অন্যের জন্যও সুযোগ রাখুন, যাতে তিনি আপনার ও আপনার জীবনের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন।
বোঝাপড়াটাই আসল কথা
একই ছাদের নিচে থেকেও বহু লোক আগন্তুক হয়ে রয়ে যায় আজীবন। আপনাদের ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়, সেজন্য একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেয়েও মন মিলিয়ে নেওয়ার দিকে বেশি নজর দিন। দুজনের বন্ধনটা যেন অন্য কোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপে ঠুনকো না হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকাটা অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে আরও বেশি জরুরি।
প্রেমের বিয়েতে আগে থেকে বোঝাপড়া থাকায় হয়তো পারিবারিক বা সামাজিক পরিসরের তৃতীয় কোনো পক্ষ অত সহজে অনধিকার চর্চা করতে পারে না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সে সুযোগটা অনেক বেশি। তাই পরিবার ও নিজের পছন্দের তালিকায় টিক চিহ্ন দিয়ে বিয়ের আলাপ পাকাপোক্ত হওয়ার পর থেকেই শুরু হোক একসঙ্গে চলার প্রস্তুতি, ডানা মেলে দিক নতুন এক প্রেমের কাহিনী।


Comments