সিজোফ্রেনিয়া কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

সিজোফ্রেনিয়া
ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো শারীরিক সমস্যার মতোই মানসিক সমস্যাকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা জরুরি। সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি মানসিক রোগ, যা অনেকেই অবহেলা করে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু চিকিৎসা না হলে এই রোগ বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি হত্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে এটি।

সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

সিজোফ্রেনিয়া কী ও কেন হয়

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, সিজোফ্রেনিয়া একটি গুরুতর মানসিক রোগ। এ রোগে রোগী নিজে বুঝতে পারেন না বা কখনো স্বীকার করেন না তার কোনো মানসিক রোগ আছে।

সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় তার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। সাধারণত বংশে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে পরে আরেকজনের হতে পারে। এ ছাড়াও নানাবিধ কারণে সিজোফ্রেনিয়া হয়ে থাকে। শৈশবে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে হতে পারে, শৈশবে কেউ যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকে, অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কিংবা পরিবেশে বড় হয় সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে তার মধ্যে।

সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জেনেটিক। মস্তিষ্কে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার বা ক্যামিকেলের অস্বাভাবিকতা, ঘাটতি কিংবা তারতম্য হলে এই রোগটি হয়ে থাকে।

পরিবেশগত কোনো কারণ সিজোফ্রেনিয়ার জন্য খুব একটা দায়ী না। তবে কখনো কখনো বলা হয়, যাদের জন্ম হয় শীতকালে তাদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার হার অন্যদের থেকে খানিকটা বেশি।

নারী এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যে এই রোগটি হওয়ার হার সমান। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া রোগের উপসর্গ বেশি দেখা দেয়। তবে যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির প্রধান কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

১. রোগীর মধ্যে কখনো কখনো চিন্তার অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়।

২. রোগী অন্যকে সন্দেহ করা শুরু করতে পারেন।

৩. হ্যালুসিনেশন হয়। হ্যালুসিনেশন অর্থ ব্যক্তি এমন কিছু শুনতে পান, নাকে গন্ধ পান, চোখে দেখতে পান, এমনকি স্পর্শ অনুভব করতে পারেন যেটির কোনো ভিত্তি বা সত্যতা নেই।

৪. রোগীর ডিলিউশন হয় অর্থাৎ তিনি ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে থাকেন। যেমন- কেউ তার ক্ষতি করতে পারেন, কেউ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, অনেক সময় মনে করেন তার চিন্তা কেউ চুরি করে নিচ্ছেন অথবা কখনো মনে করেন তার চিন্তা কেউ ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তার চিন্তা অন্যরা বুঝে ফেলছেন।

৫. আগ্রাসী আচরণ থাকতে পারে।

৬. নিজের প্রতি যত্ন কমে যেতে পারে।

৭. একা একা কথা বলেন রোগী।

৮. কানে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান। মনে করতে থাকেন যে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তার সব কর্মকাণ্ড কারো মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি

সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের আত্মহত্যা করার ঝুঁকি থাকে, অন্যকে হত্যা করারও ঝুঁকি থাকে। নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা থাকে। এ ছাড়া পড়ালেখা, অফিসের কাজ, ব্যক্তিগত কাজ অর্থাৎ সব কাজে তার মনোযোগ ও সক্ষমতা কমে যায়।

কী করে বুঝবেন সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে, চিকিৎসা কী

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তির চিন্তার অস্বাভাবিকতা হচ্ছে, তিনি কাউকে সন্দেহ করছেন, কানে গায়েবি আওয়াজ শুনছেন, একা একা কথা বলছেন, এলেমেলো কাজ করছেন, এলোমেলো কথা বলছেন এবং নিজের যত্ন নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন  তাহলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ রয়েছে।

এক্ষেত্রে রোগী কখনো স্বীকার করবেন না তার মানসিক সমস্যার কথা। পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি খেয়াল করতে হবে যত্নের সঙ্গে। তাই রোগীর ইচ্ছায় হোক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই হোক, তাকে যেকোনোভাবে অবশ্যই একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। উপসর্গ দেখে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা-নীরিক্ষার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগ শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন রোগীকে।

সিজোফ্রেনিয়া রোগীর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে ওষুধ সেবন।

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী। আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারা জীবন রোগীদের ওষুধ খেতে হয়। এসব রোগীদের সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, পরিবারের কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের কাজ বাড়ানোর জন্য তাদেরও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়া যেহেতু নিরাময়যোগ্য রোগ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময় হয় না। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago