জিকা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করণীয়

জিকা ভাইরাস
ছবি: রয়টার্স

জিকা ভাইরাস একটি বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা এডিস মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়। জিকা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

জিকা ভাইরাস কী ও কীভাবে ছড়ায়

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, জিকা ভাইরাস একটি বিশেষ ধরনের ভাইরাস, যা এডিস মশার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। জিকা সংক্রামক রোগ, এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস একজনের কাছ থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারী জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ শিশুর ভেতর সংক্রামিত হয়। একজন সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তাহলে তার গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতার কারণ তৈরি করতে পারে জিকা ভাইরাস।

জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেক সময় পূর্ণবয়স্ক মানুষ কিংবা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা করতে পারে, যা পরবর্তীতে গুলেন বারি সিনড্রোম রূপ লাভ করতে পারে।

জিকা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুঝুঁকি খুবই কম। তবে অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির মতই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অপুষ্টিতে ভুগছেন, অতিরিক্ত ওজন, অন্তঃসত্ত্বা নারী, যারা আগে থেকেই অন্যান্য রোগে ভুগছেন তাদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা ডেঙ্গু হয়েছিল তাদেরও ঝুঁকি বেশি, কারণ পাশাপাশি দুটি রোগ হলে জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

লক্ষণ

জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণের ডেঙ্গুর সঙ্গে মিল রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে প্রথম কয়েক দিন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

জ্বর হতে পারে, অস্থিসন্ধি ও মাংশপেশিতে ব্যথা হতে পারে, ক্লান্তি লাগা, অবসাদ লাগা, শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চোখ থেকে পানি পড়তে পারে। ডেঙ্গুর সঙ্গে মিল রয়েছে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায় যে কারণে অনেকে বুঝতে পারেন না এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা করা ছাড়া বোঝাও মুশকিল।

চিকিৎসা

জিকা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। রোগ প্রথম দিকে শনাক্ত হলে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে খুব বেশি জটিলতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, তরল জাতীয় খাবার খেতে জবে, জ্বর ও ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।

জিকা ভাইরাস অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বিপজ্জনক। তাই গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো চিকিৎসা নেই, অন্যান্য সহায়তামূলক চিকিৎসা দিয়ে রোগের জটিলতা যাতে না হয় সেই চেষ্টা করা যেতে পারে।

এছাড়া জিকা ভাইরাস থেকে গুলেন বারি সিনড্রোম ও অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গুলেন বারি সিনড্রোম রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে রাখা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিনের অবহেলা এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করণীয়

ডা. মুশতাক বলেন, বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে এবং তা ছড়িয়েছে। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে, একইসঙ্গে রয়েছে চিকুনগুনিয়াও। ডেঙ্গুর জন্য যে ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকা দরকার জিকা ভাইরাসেরও জন্য একই রকম থাকা উচিত। সরকারের রোগ নজরদারি ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি। এমনকি ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধেও রোগ নজরদারি ব্যবস্থা যথাযথ নয়।

এডিস মশার কামড়ে জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ছড়ায়। তাই যখন কারো ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হবে তখন ডেঙ্গু শনাক্ত না হলে এর পাশাপাশি জিকা এবং চিকুনগুনিয়া আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।

রোগ শনাক্তে নির্দিষ্ট সংখ্যক নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যে এলাকায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে সেই এলাকায় যত ডেঙ্গু রোগী বা ডেঙ্গু সন্দেহে যারা আসবে তাদের পরীক্ষা করতে হবে, এছাড়া কমিউনিটির ভেতরে সবার পরীক্ষা করতে হবে জিকা ভাইরাস সংক্রমিত কিনা।

যেখানে ক্লাস্টার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে সবার নমুনা নিয়ে প্রথমে ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে জনস্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী।

ক্লাস্টার ভিত্তিতে রোগ শনাক্তে পরীক্ষা করা হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকা সম্ভব। তা না হলে অজানাই থেকে যাবে কোনো মানুষ এই সমস্যায় ভুগছে, যা জনস্বাস্থ্য সমস্যা আরো অনেক বেশি গুরুতর করে তুলতে পারে।

প্রতিরোধ

মানবস্বাস্থ্যের জন্য এডিস মশার কামড় থেকে মুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে। মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের পাশাপাশি, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া শনাক্তে খুব সহজেই যাতে পরীক্ষা করতে পারে তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে হবে। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে, কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জিকা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হতে হকে। জিকা ভাইরাসের প্রতিষেধক নেই, সম্মিলিত সচেতনতার মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu election sees spontaneous turnout of voters

Ducsu election is being held at eight centres of the campus with nearly 40,000 registered voters and 471 candidates vying for 28 central posts.

52m ago