থানকুনি পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার পদ্ধতি জানেন কি

থানকুনি পাতা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার বহু শতাব্দীর পুরোনো। এর মধ্যে অন্যতম থানকুনি পাতা, যাকে অনেকে 'মানকচু পাতা', 'ব্রাহ্মণী শাক' ইত্যাদি নামেও চেনেন।

সহজলভ্য ও সুলভ এই ভেষজ পাতা প্রাচীনকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও প্রাচীন চীনা চিকিৎসাশাস্ত্রে থানকুনি পাতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে পেটের অসুখ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময় এবং ত্বকের যত্নে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

সুস্থ থাকতে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। থানকুনি পাতা বা শাক ও একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। চলুন জেনে নেই থানকুনি পাতার উপকারিতা। এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

তিনি বলছেন, থানকুনি পাতা সহজলভ্য, সুলভ ও বহুগুণসম্পন্ন এমন একটি প্রাকৃতিক ওষধি খাদ্য, যা সুস্থ জীবনযাপনে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি রাখা আবশ্যক। তাই থানকুনি পাতার তরকারি খাদ্যতালিকায় রাখলে মিলবে বিশেষ উপকারিতা।

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ

থানকুনি পাতা আকারে ছোট হলেও এতে রয়েছে বহু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম থানকুনি পাতায় গড়ে পাওয়া যায়—

ক্যালরি: প্রায় ৩০-৩৫ ক্যালরি

প্রোটিন: ২-৩ গ্রাম

ফাইবার: ২ গ্রাম

ভিটামিন এ: চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী

ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স: শরীরের শক্তি উৎপাদন ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য জরুরি

ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের গঠন শক্তিশালী করে

আয়রন: রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ: ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্রাইটারপিনয়েড ইত্যাদি

এই পুষ্টি উপাদানগুলো একত্রে শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

১. হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পেটের সমস্যা নিরাময়: বাংলাদেশে থানকুনি পাতা সাধারণত পেটের গ্যাস, অম্লত্ব ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা ফাইবার ও ভেষজ উপাদান হজমতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। এছাড়া পেট ব্যথা, অজীর্ণতা বা অরুচির সমস্যা কমাতে থানকুনি পাতার রস উপকারী।

২. স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: থানকুনি পাতাকে অনেক সময় 'ব্রেইন ফুড' বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, স্নায়ুকোষ সক্রিয় রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: থানকুনি পাতায় থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে ফ্রি-র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং বারবার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে।

৪. লিভারের জন্য উপকারী: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান বা অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। থানকুনি পাতা লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।

৫. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: থানকুনি পাতার ভেষজ উপাদান রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিয়মিত গ্রহণ করলে হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।

৬. ত্বকের যত্নে থানকুনি: এটি ত্বকের প্রদাহ কমায়, ব্রণ নিরাময় করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। বিশেষ করে শুষ্ক ও অ্যালার্জি প্রবণ ত্বকের জন্য এটি একটি কার্যকর ভেষজ উপাদান।

৭. উদ্বেগ ও অনিদ্রা কমাতে: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, থানকুনি পাতার রস মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। আধুনিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এতে থাকা ভেষজ উপাদান স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশমিত করে, মানসিক চাপ কমায় এবং অনিদ্রা দূর করতে সহায়তা করে।

৮. বাত ও প্রদাহজনিত রোগে উপকারী: থানকুনি পাতা প্রদাহবিরোধী গুণে সমৃদ্ধ। ফলে বাতজনিত ব্যথা, হাড়ের ব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে এটি কার্যকর।থানকুনির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যর কারণে এটি পেট এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। পেটের আলসার এবং মূত্রনালীর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সকালে সেদ্ধ থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে এই পানীয় পান করলে মিলবে উপকারিতা।

৯. চুলের যত্নে থানকুনি: চুল পড়া রোধ ও মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে থানকুনি পাতা উপকারী। এতে থাকা আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

খাওয়ার পদ্ধতি

থানকুনি পাতা কাঁচা বা সেদ্ধ শাক হিসেবে খাওয়া যায়।

রস বের করে অল্প মধুর সাথে খাওয়া জনপ্রিয় পদ্ধতি।

চাটনি, ভর্তা বা সালাদেও ব্যবহার করা যায়।

ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও এর বহুল প্রয়োগ রয়েছে।

সতর্কতা

যদিও থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবুও কিছু ক্ষেত্রে এটি সাবধানে ব্যবহার করা প্রয়োজন—

১. অতিরিক্ত গ্রহণ স্বস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেশি খেলে বমি, ডায়রিয়া বা মাথা ঘোরাতে পারে।

২. অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না গ্রহণ করাই ভালো।

৩. অ্যালার্জি প্রবণ ব্যক্তি: কারও কারও ত্বকে বা শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

৪. দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার: অনেকদিন একটানা ব্যবহার করলে লিভারের উপর চাপ পড়তে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

6h ago