জন্মবার্ষিকীর আলোচনা

ইনক্লুসিভ সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা ফজলুল হক

‘আজকের বাংলাদেশে শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ছবি: হাসান সিকদার

প্রান্তিক মানুষের অধিকারের প্রশ্নে এবং ইনক্লুসিভ সমাজের জন্য শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি প্রজাদের নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শেরেবাংলার জীবনী নিরপেক্ষভাবে পাঠ করা বেশি প্রয়োজন। শেরেবাংলার ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ডেইলি স্টার ইতিহাস আড্ডার দ্বিতীর পর্বের আয়োজনে কথাগুলো বলেন বক্তারা। 

'আজকের বাংলাদেশে শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা' শিরোনামে এ আলোচনার আয়োজন করা হয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার সেন্টারে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজেন। তিনি বলেন জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর নানান ধরনের প্রশ্ন উঠছে, ইতিহাস আড্ডার মাধ্যমে সেগুলোর সংকট সমাধানের সূত্র পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত, নিপীড়নমূলক আইন, বেকার সমস্যা নিয়ে ফজলুল হকের ভূমিকা ও চিন্তা ১৯৩৬ সালে দেওয়া প্রস্তাব আজও প্রাসঙ্গিক। 

অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, 'মানুষ তার নিজের ইতিহাস তৈরি করে, কিন্তু ঠিক যেমনটি সে চায় তেমনভাবে নয়।' মিথ তৈরির বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, নেতাদের অতিরিক্ত প্রশংসা বোধগম্যতাকে বিকৃত করতে পারে। তাই এ কে ফজলুল হককেও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি ফজলুল হকের বিনা মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, গ্রামীণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ঋণ সালিসি বোর্ডের মতো সংস্কারগুলোর কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, 'মহাত্মা', 'জাতির জনক', 'শেরেবাংলা' এমন উপাধির মধ্যে কাউকে আটকে না রেখে মুক্তভাবে চর্চা করা উচিৎ। সার্বিকভাবে  ইতিহাসের গোজামিল থেকে বের হয়ে আসতে হবে।  

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেরেবাংলার জীবনের একটি তীব্র এবং নিরপেক্ষ পাঠের দাবি রয়েছে। 'আমরা যদি তাঁর দ্বন্দ্বগুলো চিহ্নিত না করে কেবল তাঁর প্রশংসা করি, তাহলে আমরা এগিয়ে যাব না' বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ কে ফজলুল হককে একজন বহুমাত্রিক, পরীক্ষামূলক নেতা হিসেবে বর্ণনা করে আলতাফ পারভেজ বলেন, 'ভূমি সংস্কার এবং ঋণমুক্তির মাধ্যমে ফজলুল হক বাংলাকে এক নতুন চেতনায় জাগ্রত করেছিলেন।'

তিনি আরও বলেন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলার সম্প্রীতির বন্ধন জোড়া দেওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। তথাপি সে পথে ধর্ম বর্ণ বৈষম্য দূর করতে কাজ করেছেন ফলে তাঁকে বলা যায় ইনক্লুসিভ সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা ফজলুল হকের। আমি আহবান করব-- ইতিহাসের প্রয়োজনে এমন ব্যক্তিদের ক্রিটিক্যালি পাঠ করতে। 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খানের বক্তব্যে উঠে আসে বাঙালি মুসলমানদের জন্য শিক্ষা, ভূমিহীনদের জন্য ভূমি অধিকার এবং ঋণ থেকে মুক্তির জন্য শেরেবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা। তিনি বলেন, সমাজের নীতি ও ন্যায্যতা প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। তার পূর্ণাঙ্গ জীবনী ও আদর্শ জানতে একাধিক খন্ডে জীবনী লেখার আহবান জানান তিনি। 

লেখক তরুণ ইউসুফের বক্তব্যে উঠে আসে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির আশা জাগিয়ে তুলে পুনরায় অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে সেই হতাশার কথা। তিনি বলেন, প্রান্তিক মানুষের অধিকার যখনই অপূর্ণ থাকে, তখনই ফজলুল হক প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। এবং বাংলা অঞ্চলে যে জাতীয়তাবাদ তা সমাজে ছড়াতে ভূমিকা রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,  আর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন ফজলুল হক। তাছাড়া সমাজের নানান সংকটে কথা বলেছেন, মানুষের মুক্তিতে কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি-এর উপাচার্য অধ্যাপক পারভিন হাসান। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাটি মনের ভেতর ধারণ করতে হবে। আর সেই উদাহরণগুলো পাওয়া যাবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের অনেক প্রতিকূলতার ভেতরও শিক্ষা, কৃষি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর দিকে তাকালে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনামসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি ইমরান মাহফুজ। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে আড্ডায় মিলিত হন একদল তরুণ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নগরীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমীরা।

উল্লেখ্য গত ১৪ অক্টোবর ডেইলি স্টার ইতিহাস আড্ডার প্রথম আয়োজন ছিল ঢাকার নায়েব-নাজিম জসরত খানের দৌহিত্র বিদ্রোহী নবাব শামসউদ্দৌলাকে নিয়েকে নিয়ে 'ঢাকার বিদ্রোহী নবাব' শিরোনামে। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লোক গবেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

16h ago