ফেমিসাইড কী? বেশি ঝুঁকিতে কারা?

ছবি: জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে

'ফেমিসাইড' মানে ইচ্ছাকৃতভাবে নারীকে হত্যা করা। এর কারণ মূলত নারীবিদ্বেষ। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার সবচেয়ে নির্মম রূপ ফেমিসাইডকে 'বৈশ্বিক সংকট' অ্যাখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।

লিঙ্গীয় বিদ্বেষমূলক এ ধরনের অনেক অপরাধই আছে। সিরিয়াল ফেমিসাইড, অনার কিলিং, নারী গণহত্যা, জাতিগত নারী নিধন, লেসবিয়ান হত্যা, ইন্টিমেট পার্টনার কিলিং—এগুলো ফেমিসাইডের বিশ্বজুড়ে পরিচিত কিছু নাম।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ফেমিসাইডের উদাহরণ হতে পারে—যৌতুক। তথাকথিত বা সাধারণ হত্যাকাণ্ড থেকে এটি আলাদা। ফেমিসাইডের ক্ষেত্রে নারীকে লিঙ্গ সম্পর্কিত বৈষম্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করে হত্যাকারী।

বাড়িতে, কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জনপরিসরে এবং অনলাইনে—একাধিক সহিংসতার ধারাবাহিকতায় ঘটে ফেমিসাইড। এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও সহিংসতা এবং পাচার অন্তর্ভুক্ত।

তবে ফেমিসাইড শুধু পারিবারিক হত্যাই নয়; এটি ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, তথাকথিত 'সম্মান রক্ষা'র নামে হত্যা, লিঙ্গ পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষজনিত অপরাধ, যুদ্ধ বা সংঘাত, মানবপাচার বা গ্যাং-সংক্রান্ত সহিংসতার সঙ্গেও সম্পর্কিত।

ফেমিসাইড কেন ঘটে?

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) এবং নারী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওমেন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্য তথা পুরুষের কঠোর পিতৃতান্ত্রিক ও কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব, লিঙ্গভিত্তিক ধ্যান-ধারণা ও সামাজিক রীতিনীতি ফেমিসাইডের মূল চালিকাশক্তি।

গবেষকদের দাবি, স্বামী কিংবা প্রেমিকের হাতে খুন হওয়াটাই সম্ভবত একজন নারীর জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। এর পেছনে পুরুষের কঠোর কর্তৃত্বপূর্ণ মনোভাব কাজ করে। অনেকক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরাও ইন্টিমেট ফেমিসাইডের শিকার হন।

বিশ্লেষকদের মতে, স্বাবলম্বী নারীরা সংসারে কিংবা প্রেমের সম্পর্কে সব বিষয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে পুরুষের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চান না। এতে পুরুষের মনে ধীরে ধীরে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ফেমিসাইড।

প্রকৃত সংখ্যা

বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত ফেমিসাইডের গ্রাফ ক্রমান্বয়ে ওপরের দিকে উঠছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাদের মতে, ধর্ষণ ও যৌতুকের ব্যাপারগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা চেপে যান। ফলে এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন।

তথ্য সংগ্রহে দুর্বলতা এবং অপরাধ অনুসন্ধানে বৈষম্যের কারণে প্রতি ১০টির মধ্যে ৪টি নারীহত্যাই লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণে কি না, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।

বেশি ঝুঁকিতে কারা?

নির্দিষ্ট কিছু পেশার নারীরা ফেমিসাইডের শিকার বেশি হন। এর মধ্যে আছে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী।

বিভিন্ন জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি চারজন নারী সাংবাদিকের মধ্যে একজন অনলাইনে শারীরিক সহিংসতার হুমকি, এমনকি মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছেন।

এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রতি তিনজন নারী সংসদ সদস্যের একজন অনলাইনে সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে পরিবেশ-সংক্রান্ত সংঘাতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এ সময়ে কমপক্ষে ৮১টি সংঘাতে নারী পরিবেশ রক্ষাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব সহিংসতা নারীর জনসমক্ষে ভূমিকা পালনে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Inside a coordinated assault on The Daily Star

Reporter recounts how vandalism, smoke, and security threats shut down the newsroom

23m ago