ভোটারের টাকায় ভোট করে নির্বাচিত, পেলেন মোটরসাইকেল উপহার

ভোটারের টাকায় নির্বাচিত
ভোটারদের উপহারের মোটরসাইকেল নিচ্ছেন মূর্তজ আলী। ছবি: সংগৃহীত

মূর্তজ আলী ছোট মনোহারী দোকানের মালিক। যুবক বয়স থেকেই মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যাওয়ার অভ্যাস তার। এক সময় এলাকার লোকজনই তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। নির্বাচন করার খরচের একটি বড় অংশের ব্যয়ভারও বহন করেন তারা।

এভাবে প্রথম দফায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে মূর্তজ আলী ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণ করেন ভালোভাবেই। তাই দ্বিতীয় দফাতেও ঘটে একই ঘটনা। এবারও ভোটাররা তার পক্ষে শ্রম দিয়ে, অর্থ খরচ করে তাকে বিপুল ভোটে পুনর্নির্বাচিত করে আনেন।

শুধু তাই নয়; দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর মূর্তজ আলীর চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে তাকে আড়াই লাখ টাকায় কেনা একটি মোটরসাইকেলও উপহার দিয়েছেন।

জনপ্রতিনিধির প্রতি ভোটারদের ভালোবাসার এমন ব্যতিক্রমী উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে। মূর্তজ আলী এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (মুমিনপুর-গড়ানচালা) নির্বাচিত সদস্য।

ভোটারের টাকায় নির্বাচিত
মূর্তজ আলী। ছবি: সংগৃহীত

এ দফায় রসুলপুল ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৯ ডিসেম্বর। তবে মূর্তজ আলীর বিজয় মিছিল ছিল গতকাল বুধবার। বিজয় মিছিল শেষে এলাকাবাসী তার জন্য কেনা মোটরসাইকেলটি হস্তাস্তর করেন।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, মূর্তজ আলীকে জেতাতে তারা 'নিজের খেয়ে' তার পক্ষে কাজ করেছেন। তারা বলছেন, মূর্তজ আলী সবসময় মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে আসা মানুষ। কিন্তু চলাচলের জন্য তার নিজের কোনো যানবাহন ছিল না। তাই কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো অন্যের মোটরসাইকেলে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন।

মুমিনপুর ডি এস পি উচ্চ বিদ্যালেয় সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, 'তিনি (মূর্তজ আলী) এভাবে আমাদের জন্য আর কতদিন করবেন! একথা ভেবে এবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা সবাই মিলে তাকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।'

সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, মূর্তজ আলী সবসময় ন্যায়ের পক্ষে, মানুষের পক্ষে ছিলেন। তাই জনগণও তাকে হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছে।

ভোটারের টাকায় নির্বাচিত
নির্বাচিত হওয়ার পর বিজয় মিছিলে মূর্তজ আলী। ছবি: সংগৃহীত

মুমিনপুর এলাকার রিকশাচালক মো. ইসমাইল মিয়া বলেন, 'দিন-রাতের বালাই নেই। বিপদে-আপদে মূর্তজ মেম্বারকে যেকোনো সময় ডাকলেই পাওয়া যায়। তাই আমরাও তাকে একটি গাড়ি (মোটরসাইকেল) দিতে পেরে খুশি।'

ইসমাইল মিয়ার মতো একই কথা জানান ঘুনার দেউলি এলাকার জয়নাল আবেদীন ও সেন্টু মিয়া। এদের মধ্যে সেন্টু মিয়া উপহারের মোটরসাইকেল কেনার জন্য ২ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তাকে উপহারটি দিতে পেরে আমরা খুব শান্তি পেয়েছি। এজন্য সবাই কম-বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।'

এলাকার মানুষের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে আপ্লুত মূর্তজ আলী। তিনি বলেন, 'মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে যে তাদের কাছে আমি চিরঋণী হয়ে আছি।'

এই জনপ্রতিনিধির ভাষ্য, মানুষ অনেক আশা নিয়ে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। তাই নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করার সুযোগটা কাজে লাগানোও পবিত্র দায়িত্ব।

তাই ভোটারদের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতিদান দিতে এবারও তিনি অসহায়, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করে যেতে চান।

Comments

The Daily Star  | English

New public service ordinance: Govt mulls softening strict provisions

Say high-level meeting sources; Secretariat employees suspend protests for today

10h ago