নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ব্যর্থ হবে, কোনো আশঙ্কা নেই: ইসি সানাউল্লাহ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে ইসির বিশেষ বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন বানচাল বা ক্ষতিগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী কঠোর অবস্থানে থাকবে।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ।

তিনি বলেন, 'যারাই এই নির্বাচনকে বানচাল করার, প্রতিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা করবেন তারা ব্যর্থ হবেন। এবং যেখানে যতটুকু দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন সব বাহিনী ততটুকু দৃঢ় হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইস ভেরি ক্লিয়ার।'

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'নির্বাচন সময়মতো হবে। নির্বাচনের পথে যে বাধাগুলো তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন ও সরকার অবহিত'। 

সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব কার্যক্রম এ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে সন্তুষ্টির কথাও বলেন তিনি।

বৈঠকের আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে একটি ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। সেটা জনাব শরীফ ওসমান হাদীর ওপর চোরাগোপ্তা হামলা। এটি নিয়ে বিশাল আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা বিস্তারিত বলছি না। তবে সেখানকার কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে আমরা অবহিত হয়েছি, যেগুলোর সঙ্গে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত'।

ইসি সানাউল্লাহ জানান, দুটি উপজেলায় নির্বাচন অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো প্রচেষ্টা হয়েছে। 

তিনি বলেন, চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি যেন ঘটলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে অধিক সংখ্যায় চেকপোস্ট বসানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধিক সংখ্যায় চেকপয়েন্ট বসিয়ে সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম ও চলাচল সীমিত করা, বাইরে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, 'গতকাল থেকে 'রেবেল হান্ট' নামে যে অপারেশনটি আবার শুরু হয়েছে, তার দ্বিতীয় ফেজ সমন্বিতভাবে চলবে—এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে'।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

গোয়েন্দা কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর গোয়েন্দা উপাত্ত সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা এবং ওইসব অঞ্চলে সাম্প্রতিক কিছু প্রবণতার সঙ্গে বৃহত্তর কোনো ঘটনার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'আমরা অবগত আছি, অবহিত আছি, সতর্ক আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে যেসব চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর স্বরূপ নিরূপণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে প্রতিহত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।

তিনি আরও বলেন, 'যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, বন্ধু সেজে থাকছেন, তাদের ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল ও মাঠে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। কারণ এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে'।

বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, 'তফসিল ঘোষণার পর থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি, সামনে আমাদের কার্যক্রম ও কৌশল কী হওয়া উচিত—এসব বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে'।

রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দোষারোপ প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'এ ধরনের পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসী বা নাশকতাকারীরা যেন কোনো সুযোগ না পায়, সেটাও আলোচনায় এসেছে'।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানো নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানান তিনি। 

তার ভাষ্য, নির্বাচনী পরিবেশ সহনীয় রাখতে সব পক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। 

নির্বাচনের সময় কোনো ঘটনা নিয়ে নাশকতাকারীরা যেন উৎসাহিত বোধ না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেন তিনি।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীর ওপর গুলির ঘটনা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'যারা এই কাজ করছে, তারা ভীতির পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে। সেটাকে ডিফাই করার জন্যই আজকের এই বৈঠক'।

তিনি বলেন, 'তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর যেকোনো ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়তে পারে, এটা অস্বাভাবিক নয়। এমনকি স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। সেটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হচ্ছে'।

ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, 'পৃথিবীর কোথাও কোনো পরিবেশে সব পরিস্থিতিকে জিরো করে ফেলা সম্ভব নয়। তবে দেখতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করছে কি না'।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments