পাহাড়ে জঙ্গি ট্রেনিং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফল: রাশেদ খান মেনন

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার শাহবাগে গণমিছিল ও সংহতি সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। পাহাড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ, জঙ্গিদের ট্রেনিং হচ্ছে। এই জঙ্গিরা আমাদের শান্তি ও উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন' আয়োজিত সংহতি সমাবেশটি সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ করে। সমাবেশে পাহাড়ি বাঙালি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

সংহতি সমাবেশে বক্তারা ২৫ বছরেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

সমাবেশে রাশেদ খান মেনন বলেন, 'এই চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কেবল পার্বত্য জনগোষ্ঠীর নয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের, আমাদের সবার। পাহাড়ে জঙ্গিদের ট্রেনিং প্রমাণ করে যে, এই চুক্তি কেবল আদিবাসীদের জন্য নয় বাঙালিদের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'যেই সরকার চুক্তি করেছিল সেই সরকারের আমলে পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পর চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হবে - এমনটা কাম্য ছিল না। ১৯৭২ সালের সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় নাই। এই সময়ে এসে আদিবাসীদের পরিচয়কে অস্বীকৃতির মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতি এক ধরণের অবজ্ঞা দেখানো হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তাই আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই।'

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, 'পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে উপনিবেশিক কায়দায় শাসন শোষণ অব্যাহত রয়েছে। সেখানে মানুষর জীবন নিরাপদ নয়, নিরাপত্তাহীনতায় বাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলার শ্রমিক, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ের মতো এই লড়াইটাও সম্পর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ। আজকে পাহাড়ে ঢুকতে গেলে জাতীয় পরিচয় পত্র দেখাতে হয়। সমতলের কোথাও এমন নজির নেই। তাহলে একই দেশে দ্বৈত শাসন হবে কেন?'

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, '২৫ বছর একটি রাষ্ট্রের জন্য অনেক সময়। ১৪ বছর একটি রাজনৈতিক দলের জন্যও দীর্ঘ সময়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই সময়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল। এই চুক্তিতে প্রতারণা করা হয়েছে। চুক্তির পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার পেয়েছিল। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি এক পক্ষ পুরস্কৃত, আরেক পক্ষ প্রতারিত।'

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, 'একদিকে শান্তি চুক্তি করবেন, অন্যদিকে আদিবাসীদেরকে সংখ্যালঘু করতে বাইরে থেকে পাহাড়ে লোক নিয়ে যাবেন তা ঠিক নয়। তিনি সরকারকে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিও জানান।'

বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, '২৫ বছর আগে যে চুক্তি হয়েছিল মনে করেছিলাম সেখানে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও শান্তির উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেখানে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও শান্তি ছিল না।'

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর প্রমুখ। সভায় সংহতি জানান, নাগরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, ঐক্যন্যাপ, জন উদ্যোগ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, গণ ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, এএলআরডি, আইপিডিএস, বেলা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, আরডিসি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট।

Comments

The Daily Star  | English

Secretariat protest: Police file case against 1,200 over attacks, vandalism

At least 75 people were injured as clashes broke out at the Secretariat between law enforcers and HSC examinees

1h ago