আইনজীবী-কর্মচারী সমিতির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আদলত, কার্যক্রম,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। ছবি: মাসুক হৃদয়/ স্টার

আইনজীবী সমিতি ও কর্মচারী সমিতির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্তত ১০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

আদালত চত্বরে জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বিক্রি বন্ধ করতে আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামকে অপসারণ দাবিতে আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা।

অন্যদিকে, আইনজীবী কর্তৃক বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ ও কর্মচারীদের মারধরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে আদালতের কর্মচারীরা।

আজ বুধবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানবীর ভূঁঞা ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলের নেতৃত্বে সাত শতাধিক আইনজীবী আদালত চত্বরে মিছিল করেন। এরপর তারা সমিতি ভবনের সামনে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানবীর ভূঁঞা অভিযোগ করেন, আদালত চত্বরে জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বিক্রির সঙ্গে আদালতের দুর্নীতিবাজ কর্মচারী নাজির মোমিনুল ইসলাম জড়িত। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা জজের কাছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অপরদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ফারুকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ওই বিচারককে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আইনজীবীদের আদলত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

অভিযোগ নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, গত ২ জানুয়ারি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আইনজীবীরা মামলা ফাইলিং করতে এজলাসে আসেন। এরপর মামলা ফাইলিং করতে রাজি হইনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এজলাস চলাকালীন সময়ে বারের সভাপতিসহ ১০/১৫ জন আইনজীবী এসে বিচারক ও কর্মচারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ করেন। তাদের এই আচরণে আদালত অবমাননা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে নাজির মমিনুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১ জানুয়ারি তাকে তিন দিনের সময় দিয়ে শোকজ করা হয়। তিনি শোকজের জবাব দেননি। আজ বুধবার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত নাজির মমিনুল ইসলাম চৌধুরীকে পদাবনতি দিয়ে একই আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তাদার পদে নিয়োজিত করে আজ আদেশ জারি করেছেন জেলা জজ।

এর আগে, বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে তারা জেলা জজ আদালতের প্রবেশমুখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি শুরু করার আগে তারা আদালতের এজলাস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী উজ্জ্বল ইসলাম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত প্রায় তিনশ কর্মচারী আজ থেকে একযোগে কর্মবিরতি পালন করছে। একটি মামলার ঘটনায় শুধু বিচারকের সঙ্গে নয়, কর্মচারীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।

মামলা সংক্রান্ত কাজে আদালতে আসা আখাউড়া উপজেলার ধরখার গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল মিয়া বলেন, 'আমরা একজন আসামির জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে এসেছিলাম, কিন্তু আজ বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছি। আজকের এই কর্মসূচি অযথা একজন আসামির কারাবাসের মেয়াদ বাড়িয়ে দিলো।'

নাসিরনগর থেকে আসা আরেক বিচারপ্রার্থী রোকেয়া বেগম বলেন, 'মামলার তারিখ আগে থেকেই ঠিক করা থাকায় এত দুরবর্তী এলাকা থেকে আদালতে আসতে হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে আদালতে আসা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন।'

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

25m ago