মৌলভীবাজার

জমি জটিলতায় আটকে আছে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ

পুরোনো শহীদ মিনারটির অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজার জেলার পুরোনো উপজেলা কুলাউড়ায় একটি জরাজীর্ণ শহীদ মিনার আছে। নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দও এসেছে।

কিন্তু, টেন্ডার হওয়ার পরও জমি সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে কাজ। এর দায়ও নিতে চাইছেন না কেউ।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে কুলাউড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক যুগ আগে তৈরি করা হয় এই শহীদ মিনার। এরপর আর সংস্কার করা হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে রং করা হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাঠামোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উপজেলা পরিষদ একটি জায়গাও নির্ধারণ করেছে, তবে সেটি গণপূর্ত বিভাগের জমি। কিন্তু, জমি বুঝে না পাওয়ায়, টেন্ডার হওয়ার পরও শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।

স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মহিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একুশ এলেই আমরা মাতৃভাষার জন্য জাগ্রত হই। এরপর ভাষা শহীদ বা শহীদ মিনারের কথা কেউ মনে রাখে না।'

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই শহীদ মিনার স্থাপনের দাবি ওঠে। কর্তৃপক্ষ প্রতিবার আশ্বাস দেয়। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন ধ্বংসের মুখে।'

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, 'বর্তমানে যেখানে শহীদ মিনার আছে, সেখানেই আমরা মডেল শহীদ মিনার চাই। শহীদ মিনার নিয়ে রাজনীতি না করে, এটি নির্মাণ করা উচিত।'

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কুলাউড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মাল্য মিত্র সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুলাউড়ার আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু শহীদ মিনার। এখানকার সব সংস্কৃতিপ্রেমীদের দাবি ছিল একটি আধুনিক ও সুবৃহৎ শহীদ মিনার নির্মাণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য টেন্ডার হলেও স্থান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমনকি দেরি হলে টাকা ফিরেও যেতে পারে।'

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৬০ বছর আগে এখানে শহীদ মিনার হয়েছে। শহীদ মিনারতো শহীদ মিনারের জায়গায় আছে। অন্য কোনো জায়গায় শহীদ মিনার করতে চাইলে, জেলা পরিষদের সবার সঙ্গে আলাপ করা উচিত।'

জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের পাশে পিডব্লিউডির জায়গায় শহীদ মিনারটি করতে চাচ্ছি। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু কুলাউড়া পৌর মেয়রের আপত্তি আছে।'

যোগাযোগ করা হলে কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুলাউড়ায় একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার হবে। এতে জেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ঠিকাদার নিয়োগ ও সাইট বুঝিয়ে দেওয়া।'

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান বলেন, 'আমরা শহীদ মিনারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি, টেন্ডার করেছি, ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জায়গা দিলে, আমরা কাজ শুরু করে দেবো।'

তিনি বলেন, 'শহীদ মিনারের জন্য ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য অনেক জায়গা দরকার। পাশেই সড়ক ও জনপথের জায়গা আছে। আমরা টাকা নিয়ে ঘুরছি। কর্তৃপক্ষ জায়গা দিচ্ছে না।'

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের জায়গায় শহীদ মিনার করা হবে, সে বিষয়ে আমাকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

19h ago