নালার পানিতে ভেসে গেছেন বাবা, ভেসে যাচ্ছে পরিবারের ভবিষ্যৎও

নালার পানিতে ভেসে গেছেন বাবা, ভেসে যাচ্ছে পরিবারের ভবিষ্যৎও
সালেহ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বছরদুয়েক আগে চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর মোড় এলাকায় খোলা ড্রেনে পড়ে ভেসে গিয়েছিলেন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ (৫৫)। সেই থেকে 'নিখোঁজ' তিনি।

সালেহ ছিলেন টানাটানির সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তাকে হারিয়ে ভেসে যেতে বসেছে তার পরিবার ও ২ সন্তানের ভবিষ্যৎও।

সালেহর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সালেহ বন্দরনগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রি করতেন। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট সকালে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে নগরীর অনেক সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সে সময় সালেহ ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার শরীফে যাওয়ার জন্য চকবাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বের হন।

সেখান থেকে ফটিকছড়িগামী বাস ধরতে শহরের মুরাদপুর মোড়ে যান সালেহ। তখন মুরাদপুর এলাকার সড়কগুলোও ছিল বৃষ্টির পানিতে তলানো। মোড়ের নালাটি ছিল খোলা অবস্থায়। এতে সড়কের সঙ্গে নালার ফারাক করা যাচ্ছিল না। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার এক পর্যায়ে ড্রেনে পড়ে যান সালেহ।

পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ঘটনাস্থল ও সংলগ্ন এলাকায় পরের ২ দিন টানা উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তার মরদেহের খোঁজ মেলেনি।

আগামী শুক্রবার ঘটনার ২ বছর পূর্ণ হবে।

এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি। চরম দারিদ্র্যের মধ্য অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। সালেহের স্ত্রী ও ২ সন্তান এখন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় তাদের গ্রামের বাড়ি মনসা গ্রামে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।

সালেহর ছেলে সাদেকুল্লাহ মাহিন তার বাবার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির সময় একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তবে শুধু ভাগ্যকে দোষ দিতে রাজি নন মাহিন। তিনি তার বাবার জীবনের করুণ পরিণতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন।

মাহিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নর্দমাটি ঢাকা থাকলে এবং রাস্তায় জলাবদ্ধতা না থাকলে আমার বাবা সেখানে পড়ে যেতেন না। তাই এই ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে পারে না।'

এ পর্যন্ত আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আমাকে চসিকের একটি পেট্রোল পাম্পে অস্থায়ী চাকরির প্রস্তাব দিলে আমি সেখানে যোগ দিয়ে ২ দিন কাজ করি, কিন্তু কলেজের ক্লাস এবং পরীক্ষার কারণে ওই চাকরি চালিয়ে যেতে পারিনি।'

তিনি বলেন, 'আমি মেয়রের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছি এবং আমার যোগ্যতা অনুযায়ী চসিকে একটি চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আমি গত বছর এইচএসসি পাস করে মেয়রকে অনুরোধ করেছি আমাকে একটা পিয়নের চাকরি হলেও দেওয়ার জন্য, যাতে আমি পরিবার চালাতে পারি এবং আমার ছোট বোনের শিক্ষার খরচ চালাতে পারি।'

'আমি এখনো মেয়রের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা পাইনি,' বলেন মাহিন।

সালেহ'র মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া এখন চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলার স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।  

মাহিন জানান, গত বছর তিনি ক্ষতিপূরণের জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সালেহ আহমেদের খোলা ড্রেনে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনার দায় চসিক কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। চসিকের অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।'

'চসিক কর্তৃপক্ষের উচিত তার ছেলেকে যোগ্যতা অনুযায়ী একটি উপযুক্ত চাকরি দেওয়া, অন্যথায়, দরিদ্র পরিবারটির ওপর অবিচার হবে', বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য বারবার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, 'সালেহ'র ছেলেকে  চাকরি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তা চালিয়ে যাননি।'

আবুল হাশেম আরও বলেন, 'যদি তিনি আবার চসিকের চাকরির জন্য আবেদন করেন, আমরা মানবিক কারণে বিষয়টি বিবেচনা করব।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

5h ago