প্রতি শীতে শৈত্যপ্রবাহে গড়ে ২৮১ জনের মৃত্যু

স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশে 'শৈত্যপ্রবাহ সংশ্লিষ্ট' কারণে বছরে গড়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয় বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

'কোল্ড ওয়েভ ইনডিউসড মর্টালিটিস ইন বাংলাদেশ: স্প্যাটিওটেম্পোরাল অ্যানালাইসিস অব ২০ ইয়ার্স ডাটা, ২০০০-২০১৯' শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, এরপরই রয়েছে ডিসেম্বর মাস।

গত ২০ বছরে ৮১টি শৈত্যপ্রবাহের ঘটনা ঘটেছে এবং গবেষণায় এই সময়ের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।

'শৈত্যপ্রবাহে মৃত্যুর হার জেলাভেদে একেক রকম; চলতি মাসের গোড়ার দিকে "ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস রিসার্চ" জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহের প্রবণতা বেশি এবং মৃত্যুর হারও বেশি।'

শৈত্যপ্রবাহ সম্পর্কিত মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই। গবেষকরা ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শৈত্যপ্রবাহ সম্পর্কিত খবরের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি ডেটাসেট তৈরি করেছেন এবং এরসঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য রিপোর্টের সঙ্গে তা যাচাই করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের চার জন এবং স্পেনের ওভিডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস অনুষদের দুজন গবেষক বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহে মৃত্যুর ঘটনার স্থান-কালগত প্রবণতা এবং বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।

ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালিদ হাসান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মৃত্যুহার বিষয়ে বিশদ জানা। আমরা দেখেছি যে ওই ২০ বছরে শৈত্যপ্রবাহের সময়কাল ও পুনরাবৃত্তি বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, গবেষণাকালীন শৈত্যপ্রবাহে ৫ হাজার ৬১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুহারের দিক থেকে শীর্ষে রংপুর বিভাগ, এরপরই রয়েছে রাজশাহী বিভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়নাতদন্ত না হওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা বলা মুশকিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দূষণ এ ধরনের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। অ্যাজমা রোগী এবং বয়স্কদের জন্য শীতকাল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, ঠান্ডাজনিত মৃত্যু কমাতে বায়ুদূষণ রোধ জরুরি।

২০২২ সালে মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, দূষণের কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ দশমিক ১৫ লাখেরও বেশি অকাল মৃত্যু হয়েছে।

এতে দেখা গেছে বায়ুদূষণ এই ধরনের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল। এছাড়াও পানি এবং সীসা দূষণ এবং পেশাগত ঝুঁকি এসব মৃত্যুর অন্যান্য কারণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, শৈত্যপ্রবাহে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের চেয়ে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বেশি মারা যায়।

গবেষণার প্রধান গবেষক খালিদ হাসান বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা ছেলে-মেয়ে পার্থক্য করিনি।

গবেষণায় বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো শৈত্যপ্রবাহে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রায় ৫৮ শতাংশ শৈত্যপ্রবাহ ঘটে এবং শৈত্যপ্রবাহজনিত মোট মৃত্যুর ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ ঘটে জানুয়ারিতে, যা ডিসেম্বরে ২২ শতাংশ।

জেলাভিত্তিক মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে- বছরে প্রতি ১০ লাখে ১৬৩ দশমিক ৬৩ জনের মৃত্যু।

খালিদ হাসান বলেন, গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতের গবেষণা এবং নীতি উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে যাতে শৈত্যপ্রবাহ ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, শৈত্যপ্রবাহজনিত মৃত্যু কমাতে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে।

তিনি ঠান্ডাজনিত মৃত্যুর বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য খোঁজার ওপর জোর দেন, যা সরকারকে এ বিষয়ে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে।

Comments

The Daily Star  | English

FY26 Budget: Subsidy spending to hold steady

The budget for fiscal 2025-26 is likely to be smaller than the current year’s outlay, but subsidy spending is expected to remain almost unchanged at Tk 1,15,741 crore.

9h ago