দেশের প্রথম ডাকঘরের জীর্ণ দশা

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় অবস্থিত দেশের প্রথম ডাকঘরটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাজারপাড়া এলাকায় অবস্থিত দেশের প্রথম ডাকঘরটি যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেশের গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য হওয়ার কথা থাকলেও তদারকি ও সংস্কার কাজের অভাবে তা এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

ডাকঘর সূত্র জানায়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রৌমারী শাখা ডাকঘরটি স্থাপিত হয়। ১৯৬৬ সালের ২৮ মে এটি রৌমারী সাব-পোস্ট অফিস হিসেবে উন্নীত হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রৌমারী ছিল হানাদারমুক্ত। ওই সময় রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু ছিল এবং রৌমারী ডাকঘরটির কার্যক্রমও চালু ছিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন রৌমারী সাব-পোস্ট অফিসের রাজীবপুর, যাদুর চর, টাপুর চর, দাঁতভাঙ্গা, শৌলমারী ও গেন্দার আলগা শাখা পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছিল।

১৯৮৪ সালের ৪ জুন পযর্ন্ত রৌমারী সাব-পোস্ট অফিসটির কার্যক্রম টিনশেড ঘরটিতে চালু ছিল। সে বছর ৫ জুন রৌমারী সাব পোস্ট অফিসটি উপজেলা পোস্ট অফিসে উন্নীত হলে এটির কার্যক্রম নতুন ভবনে শুরু করা হয়। টিনশেড ঘরের ডাকঘরটির পাশে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ভবন।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১৯৭১ সালে রৌমারী সি জি জামান হাই স্কুল ছিল  মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা কার্যক্রম ও সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অন্যতম সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ওই সময়ে এ ক্যাম্প থেকেই প্রায় ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রৌমারী সি জি জামান হাইস্কুলকে ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। এই ক্যাম্পে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অনেক মুক্তিযোদ্ধা রৌমারী সাব পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বাড়িতে চিঠিপত্র পাঠাতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা কোব্বাস আলী চিশতী (৭০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, বাংলাদেশের প্রথম ডাকঘরের ঘরটির প্রায় ২ ফুট অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। ঘরটির পাশে কয়েকটি প্রাচীন গাছ রয়েছে। ঝড়ে যেকোন সময় এসব গাছ ভেঙে ডাকঘরটির ক্ষতি করতে পারে।

'১৯৭১ সালে এই ডাকঘরটি জাকজমক ছিল। এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসতেন চিঠি পোস্ট করার জন্য,' তিনি বলেন।

'ডাকঘরটি রক্ষা করে ঐতিহাসিক পুরোনো জিনিসপত্র ও ডকুমেন্ট দর্শনার্থীদের দেখার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

টিনশেডের এই ডাকঘরটির রয়েছে একটি দরজা ও দুটি জানালা। ডাকঘরটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮টি সিলমোহর, একটি বাইসাইকেল, একটি টেলিফোন সেট, লেটার বক্স, একটি সিন্দুক ও কিছু ডকুমেন্ট। ডাকঘরটির ঘর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব ঐতিহাসিক জিনিসপত্র ও ডকুমেন্টগুলো সরিয়ে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার আল আমিন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধম ডাকঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ডকুমেন্ট সরিয়ে নিরাপদে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ডাকঘরটি সংরক্ষিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। পরবর্তীতে ডাকঘরের জিনিসপত্র ও ডকুমেন্ট দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা করা হবে।'

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম ডাকঘরটি সুরক্ষিত রাখতে ডাকঘরটির ওপরে কাঁচ দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করার নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ঠিকাদার নিয়োগ করে কাঁচের ঘর নির্মাণকাজ  শুরু করা হবে। 'কাঁচের ঘর নির্মাণ করা হলে ডাকঘরটিতে ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র ও ডকুমেন্ট প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হবে,'

তিনি বলেন, 'বর্তমানে ডাকঘরটি যে অবস্থায় সেই একই অবস্থায় রাখা হবে। এটির কোনো পরিবর্তন করা হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

One killed in crude bomb blast during clash at Mohammadpur Geneva Camp

The victim, Zahid, was not involved in the clash and had gone out with friends when he got caught in the middle of the violence, family says

26m ago