মৃত্যুর মিছিল যাতে আর দেখতে না হয়, তাই পদত্যাগ করেছি: হাসিনা

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায় দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঠেকাতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। 

আজ রোববার ভারতের গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাছে দেওয়া এই বার্তা দেখেছে ইকোনমিক টাইমস। বার্তায় হাসিনা দাবি করেছেন, বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চেয়েছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ তুলে না দেওয়ার কারণেই তাকে উৎখাত করা হয়েছে বলে জানান হাসিনা।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

বার্তায় হাসিনা আরও বলেন, 'মৃত্যুর মিছিল যাতে আর দেখতে না হয়, সে জন্য আমি পদত্যাগ করেছি। তারা শিক্ষার্থীদের মরদেহের ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি সেটা হতে দেইনি। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। সেন্টমার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব ছেড়ে দিলে এবং বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে আধিপত্য বিস্তার করতে দিলে আমি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতাম। আমি আমার দেশের নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানাই, 'দয়া করে কট্টরপন্থিদের কারসাজির শিকার হবেন না।'

'আমি যদি দেশে থেকে যেতাম, তাহলে আরও মানুষের প্রাণহানি হোত, আরও সম্পদ ধ্বংস হোত। খুব কষ্টকর হলেও আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমি আপনাদের নেতা হয়েছিলাম কারণ আপনারা আমাকে বেছে নিয়েছিলেন। আপনারাই আমার শক্তি ছিলেন', যোগ করেন হাসিনা।

তিনি বার্তায় আরও জানান, 'অনেক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং অনেক বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, যা শুনে আমি মর্মবেদনা অনুভব করছি। ইনশাআল্লাহ্‌, আমি শিগগির দেশে ফিরে আসব। আওয়ামী লীগ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি সব সময়ই বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করতে থাকব, যে দেশের মঙ্গলের জন্য আমার মহান পিতা সারা জীবন কাজ করে গেছেন। যে দেশের জন্য আমার পিতা ও পরিবারের সদস্যরা জীবন দিয়েছেন।'

কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, 'আমি আবারও দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে চাই। আমি কখনোই তোমাদেরকে রাজাকার বলে অভিহিত করিনি। আমার মুখের কথাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি সেদিনের পুরো ভিডিওটা আবারও দেখার অনুরোধ করছি। ষড়যন্ত্রকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।'

শেখ হাসিনার পতনের পর তার ম্যুরাল বিকৃত করে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স
শেখ হাসিনার পতনের পর তার ম্যুরাল বিকৃত করে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স

সোমবার গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে এপ্রিলে সংসদে শেখ হাসিনা জানান, যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, 'তারা গণতন্ত্র হটিয়ে এমন একটি সরকার চালু করতে চাচ্ছে, যাদের কোনো গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব থাকবে না।'

সূত্রদের দাবি, শিক্ষার্থীদের কোটা বিক্ষোভ এক পর্যায়ে বিদেশি শক্তিদের কারসাজিতে সরকার পরিবর্তনের' আন্দোলনে রূপ নেয়।

হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে ঢাকায় ক্ষমতার পটপরিবর্তনের জন্য দায়ী করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, মে মাসে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিবিদ ঢাকা সফর করেন, যিনি এর জন্য দায়ী। নেতারা অভিযোগ করেন, সেই কূটনীতিবিদ চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসিনার ওপর চাপ দেন।

আওয়ামী লীগের এক নেতা দাবি করেন, জুলাইতে মেয়াদ শেষ করা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

মার্কিন সরকার দীর্ঘ সময়য় ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

10h ago