বইমেলায় হামলা: জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ১২৪ নাগরিকের বিবৃতি

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বইমেলায় সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ১২৪ নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।

এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগে হুমকি প্রদানের পর গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় উগ্রপন্থী একটি দল সব্যসাচী নামক প্রকাশনীর স্টলে হামলা চালিয়েছে। এই মব আক্রমণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এক গুরুতর আঘাত। সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও প্রকাশককে লাঞ্ছিত করে স্টল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, এই মবগোষ্ঠী দেশের জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই ঘৃণ্য আক্রমণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০০৪ সালে কবি হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলা, ২০১৫ সালে লেখক অভিজিৎ রায় এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের হত্যাকাণ্ড থেকে সাম্প্রতিক সময়ে মাজার ভাঙা, নারীকে ফুটবল খেলতে বাধা দেওয়া, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের আল্টিমেটাম দেওয়া একই ধরনের সহিংসতার ধারাবাহিকতার অংশ। বিশেষত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ব্লগার এবং ভিন্ন চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের মানুষদের হত্যার ক্ষেত্রে প্রথমে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর প্রচারণা ও সম্মতি উৎপাদন; পরবর্তীতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও পরোক্ষ মদদে এসব হত্যার ঘটনা ঘটতে দেখেছি। খুনিদের আড়াল করা, মনগড়া নানা মিথ্যা ভাষ্য দেওয়া এবং বিচারে অনীহার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ফ্যাসিবাদী শাসক ও ধর্মীয় উগ্রবাদীরা একই স্বার্থে কাজ করেছে। 

বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী শাসনামলে কীভাবে লেখক মুশতাকের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে তাকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমরা একইভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন হতে দেখছি। গতকালের ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, বইমেলার বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর।

এই হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে বহুগুণ জোরদার করতে হবে। এই ধরনের সহিংস বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের কোনো নতি স্বীকার না করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। 

বিবৃতিদাতারা বলেন, যদি এই দাবিগুলো পূরণ না করা হয়, তবে বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।

দেশের সব গণতন্ত্রমনা মানুষকে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য অধিকার। এই অধিকার রক্ষায় আমরা অবিচল থাকব।

বিবৃতিতে সই করা উল্লেখযোগ্য নাগরিকরা হলেন, আনু মুহাম্মদ, সামিনা লুৎফা নিত্রা, নাসরিন খন্দকার, গোলাম সারওয়ার, লাবনী আশরাফি, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ড. হারুন উর রশীদ, কল্লোল মোস্তফা ও মানজুর আল মতিন।

Comments

The Daily Star  | English

ICT cases over July atrocities: Two-thirds of 206 accused absconding

Law enforcers have managed to arrest only 73 out of the 206 accused after the ICT issued warrants for their arrests

10h ago