ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

ঈদযাত্রায় যানজটের পাশাপাশি ডাকাতির শঙ্কা

ছবি: স্টার

দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় এই দুই মহাসড়কে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। এবার ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এই আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

তবে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

তারা জানান, এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ রাখতে মহাসড়কের 'অনিরাপদ' চিহ্নিত স্থানগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের টহল ও অবস্থান থাকবে।

তাছাড়া, ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে ঈদের আগে ও পরে সাতদিন মহাসড়কগুলোতে জরুরি সেবা ব্যতীত পণ্যবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

ছবি: স্টার

হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার যানজটের আশঙ্কা কম। তবে একলেন থেকে ছয়লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিতে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। তবে এ মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

পরিবহন চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর ঢাল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। এই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ৩৫ কিলোমিটারে উন্নয়ন কাজ চলছে। এই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত এক লেনের এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) সড়কের মদনপুর থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে। ২১ কিলোমিটারের সড়কটির বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব এলাকায় কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী সোহাগ পরিবহনের চালক মো. রুবেলের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'কোনো উৎসব লাগে না, এই সড়কে সব সময় যানজট থাকে। তিন ঘণ্টার রাস্তা পার হতে ছয় ঘণ্টাও লাগে।'

সড়কটির উন্নয়ন কাজে ধীরগতির অভিযোগ করেন এ চালক।

এখনো ঈদযাত্রা শুরু হয়নি। সরেজমিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর, তারাব, রূপসী এলাকায় এখনই যানজট দেখা যায়।

এ জন্য হাইওয়ে পুলিশের 'উদাসীনতাকে' দায়ী করেন এ মহাসড়কে নিয়মিত পণ্য পরিবহনকারী পিকআপের চালক জনি মিয়া।

তিনি বলেন, 'মাসের ৩০ দিনই এখানে যানজট লেগে থাকে। পুলিশ থাকলে যানজট বেশিক্ষণ থাকে না। তবে পুলিশ থাকে তাদের ধান্দায়।'

সোমবার দুপুরে কথা বলার সময় তারাব বিশ্বরোড মোড়ে কোনো পুলিশের উপস্থিতি না থাকার বিষয়টিও নজরে আনেন তিনি।

ছয়লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সম্ভাবনা কম থাকলেও মহাসড়কটির সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া, লাঙ্গলবন্দ ও মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এই স্থানগুলোতে যানজটের কারণ হিসেবে সড়কের ওপর গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, টোল আদায়ে ধীরগতি, ধীরগতির ছোট যানবাহনের অবাধ চলাচল ও অবৈধ স্ট্যান্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ মহাসড়কে যানজটের বাইরেও ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রাতে বান্দরবান যাওয়ার পথে এ মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় ডাকাতের হামলার শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। যানজটে আটকে পড়া মাইক্রোবাসে হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে ছাত্রনেতাদের মোবাইল, মানিব্যাগ লুট করে ডাকাতেরা।

পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের হিসাবে গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০টি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি। শেষ ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কেও ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সেন্টমার্টিন পরিবহনের সাইনবোর্ড কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেঘনা টোলপ্লাজা ও দাউদকান্দির পর ডাকাতির শঙ্কা বেশি থাকে। রাতে হাইওয়ের দুইপাশ থেকে ডাকাত এসে প্রায়ই গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করে। ঈদযাত্রায় এই প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।'

অনেক ক্ষেত্রে গভীর রাত কিংবা ভোরে মহাসড়কে গাড়ি থেকে নামার পর গন্তব্যে পৌঁছানোর পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন যাত্রীরা।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদীর পর থেকে অংশটিও খুব অনিরাপদ জানিয়ে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ডাকাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা টহলেরও দাবি জানান হাসান।

এদিকে ডাকাত ও ছিনতাইপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, 'ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ ইতোমধ্যে মোতায়েন রয়েছে। যেসব স্পট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোতে ফিক্সড পেট্রোল থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

4h ago