শ্রমিকদের আগের অবস্থায় রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক থেকে নেওয়া

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা হলো নতুন বাংলাদেশ গড়ার। নতুন বাংলাদেশ হবে না যদি শ্রমিকদের অবস্থা পুরোনো বাংলাদেশের মতো থেকে যায়।

তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি এবং শ্রমিক মালিক সু-সম্পর্কে স্থাপনে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিক-মালিকের পারস্পরিক ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

'শ্রমিক মালিক এক হয়ে গড়বো এ দেশ নতুন করে' এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মে দিবস উদযাপন হচ্ছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবারের মে দিবসে ভিন্নতা সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অভ্যুত্থান এবারের মে দিবসে আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ হলো—নতুন বাংলাদেশ গড়ার, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের সরকার যাত্রা শুরু করেছে।

তিনি এই লক্ষ্য অর্জনে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের প্রথম কাজ হলো শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আশুকরণীয় নিয়ে যাত্রা শুরু করা। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।'

সব পক্ষের মতামত এবং অংশীদারিত্বে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট রচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই কমিশনের সুপারিশ যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করতে পারব। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে যে যাত্রা শুরু করেছি, সেই পথ চলা অব্যাহত রাখব।

গতিশীল অর্থনীতির জন্য শ্রমিক-মালিকের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, একটি জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে শ্রমজীবী ও দায়িত্বশীল মানুষের অবদান। বাংলাদেশের পোশাক খাতসহ প্রতিটি খাতের উন্নতির পেছনে রয়েছে শ্রমিকদের পরিশ্রম ও মালিকের মেধা। দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে এই ঐক্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সম্ভাবনাময় একজন শ্রমিক যেন উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে, তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি ও সামাজিক নিরাপত্তা গড়ে তুলতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদস্য দেশ হিসেবে আমরা শ্রম মানের উন্নতিতে কাজ করছি। আমরা আইএলও ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। তবে আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে কাজ করার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি হল শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।

শ্রম অসন্তোষ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে শ্রম সন্তোষ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা কেবল শ্রমিকের অধিকার নয়, শিল্প অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। শ্রমিকের জীবন মানের উন্নতি হলে অর্থনীতি ও দেশের শিল্প খাতে প্রভাব পড়ে। একটি দেশ সমৃদ্ধ হয় তখন, যখন তার দেশের শ্রমিকরা নিরাপদ কর্ম পরিবেশে কাজ করতে পারে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে হল শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিক-মালিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গতিশীল অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচজন শ্রমিকের পরিবারের হাতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাংবোর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
NBR to become separate specialised agency

NBR officials withdraw complete shutdown programme

However, the non-cooperation programme with the NBR chairman will continue

16m ago