সুপারিশ নিয়ে বিএনপি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে, প্রত্যাশা দুদক সংস্কার কমিশনের

সংস্কারের একটি সুপারিশ নিয়ে বিএনপি যে অবস্থান তুলে ধরেছে তা  বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ২৯ নম্বর সুপারিশ নিয়ে গত ৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করার লক্ষ্যে ওই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতেই সম্মতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনগণকে অবহিত করায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে কমিশন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য আদালতের আদেশ নেওয়ার বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা বাতিল করার জন্য কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ সমর্থন করতে বিএনপির ব্যর্থতা উদ্বেগজনক।

বিশেষ করে, এ বাধ্যবাধকতা না রাখলে দুদকের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে মর্মে যেভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে তা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী। কারণ, এ বাধ্যবাধকতাই দুদকের দ্বায়িত্ব পালনে বিলম্বসহ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকরতার অন্যতম কারণ, যা দুদকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের কাছে পাওয়া তথ্য-পরামর্শ বিশ্লেষণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ ২৯-এ বলা হয়েছে, 'আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।'

উল্লেখ্য, আয়কর আইনের অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি উক্ত আইনের ৩০৯ ধারায় গোপনীয় বলে বিবেচিত এবং আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে এনবিআর দুদককে এ সকল তথ্যাদি বা দলিলাদি প্রদান করতে পারে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই আইন প্রণয়নের আগে দুদক এনবিআর থেকে যেসব তথ্যাদি বা দলিলাদি আদালতের আদেশ ছাড়াই পেতে পারতো, এই আইন প্রণয়নের পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে আদালতের অনুমতির প্রক্রিয়া বহাল রাখার পক্ষে বিএনপির অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব রোধ করার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার যুক্তি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আদালতের অনুমতির বিধান রাখার ফলে দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়—যা দুদকের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।'

'সুপারিশ-২৯ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআরের তথ্যে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন, কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা কোনো অযাচিতভাবে প্রকাশের জন্য নয়। তাছাড়া, যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে হলে আদালতের আদেশ লাগবে—কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়!'

তিনি আরও বলেন, 'এনবিআর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ ধরনের অভিগম্যতা পেয়ে থাকে। কমিশন জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের গতি, কার্যকারিতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়াবে—যা দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকরতার লক্ষ্য অর্জনের পূর্বশর্ত এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কমিশন আশা করে, বিএনপি এ বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।'

ড. জামান বলেন, 'এই সুপারিশের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, বরং দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা। কমিশন বিশ্বাস করে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য আদান-প্রদান দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কার উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

4h ago