আ. লীগ সরকারের ১৫ বছরের আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করছে দুদক

দুদক

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প গোষ্ঠী এবং ঋণ খেলাপিদের মাধ্যমে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা ধ্বংসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, কমিশন আর্থিক খাতের বড় ধরনের অনিয়মগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে, যার মধ্যে তিন জন সাবেক গভর্নর এবং চার জন সাবেক ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন।

সম্প্রতি দুদকের উপপরিচালক মোমিনুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রিভেনশন) ও মুখপাত্র মো. আখতার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'আর্থিক অনিয়মগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে। তদন্ত শেষ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। যথাসময়ে তদন্তে কী পাওয়া গেল তা প্রকাশ করা হবে।'

দুদকের সূত্র অনুযায়ী, যেসব কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির এবং আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, এস এম মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান এবং আবু ফারাহ মোহাম্মদ নাসেরের নামও আছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এবং কাজী সাইদুর রহমানের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।

গত ১৫ বছরে এই নয়জন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন।

তাদের সময়কালে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন, ঋণ নীতিমালা, ঋণ বিতরণ, অর্থপাচার, রিজার্ভ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ডলার ছাড় এবং এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো অভ্যন্তরীণ তদন্তের নথিপত্রও চেয়েছে দুদক।

২০০৯ সাল থেকে ঋণ খেলাপি পুনঃতফসিল নীতিমালা ও এতে সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—বেক্সিমকো গ্রুপ, এমআর গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ, কেয়া গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, বিবিএস গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড, অ্যানোনটেক্স গ্রুপ ও অন্যান্য কোম্পানি।

কমিশন এসব কোম্পানির নাম ও তাদের মালিকদের তথ্য, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, ঋণের পরিমাণ এবং ঋণের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছে।

২০০৯ সালের পর অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন সংক্রান্ত নোটিশ, নথিপত্র ও সার্কুলারও চেয়েছে দুদক। ব্যাংকগুলো হলো— মেঘনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ফার্মার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক)।

সালমান এফ রহমানের চিঠির জবাবে, ২০১৫ সালের ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা এবং ২০০৯ সালের পর ব্যাংক পরিদর্শন নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট নথি এবং সার্কুলারের সত্যায়িত অনুলিপি চেয়েছে দুদক।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন ও অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সব নথিপত্র ও সার্কুলারের অনুলিপিও চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে থাকলে সেই প্রতিবেদনও জমা দিতে বলেছে দুদক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'সম্প্রতি দুদক থেকে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা যথাসাধ্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh-US tariff talks underway in Washington

Based on progress made so far, Bangladesh hopes for a positive outcome

4h ago