আসন পুনর্বহালের দাবি

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানা ভাঙচুর, ৭ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: স্টার

ফরিদপুরের ভাঙ্গা সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভে ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক।

আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নিলে দুই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙ্গার পরিস্থিতি এখন শান্ত। মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।'

এর আগে, দুপুরে বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও থানায় হামলা চালায়। তারা উপজেলা পরিষদের পাশে অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয়।
উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর, পুরোনো ভবনের নিচতলার কার্যালয় ও নতুন ভবনের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। বাইরে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: স্টার

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের থানায় হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তার জন্য আমরা ভেতরে ছিলাম। দুপুরের পর মহাসড়কে যাইনি। তবে সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয়রা নিজেরাই অবরোধ তুলে নেয়।'

ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সরিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের প্রতিবাদে গতকাল রোববার থেকে তিনদিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে স্থানীয়রা।

আজ সোমবার সকালে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও, সকাল ১১টার দিকে টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। 
এরপর হামিরদী ও সোয়াদী ইউনিয়নের শত শত মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে নেমে আসে।

বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা, ভাঙ্গা থানা, উপজেলা কার্যালয় ও উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে ভাঙচুর চালায়।  পুলিশের ৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।

ইউএনও কার্যালয়ের প্রহরী মো. শামসু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুপুর পৌনে ১টার দলে শত শত লোক বাইরে থেকে ইট ছুঁড়তে ছুঁড়তে কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়ে। তারা অফিসগুলোতে ঢুকে লুটপাট করে, কিন্তু কাউকে আক্রমণ করেনি।'

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আবুল হোসেন বলেন, 'শত শত লোক কার্যালয়ে ঢুকে পড়লে আমরা আত্মরক্ষায় নিরাপদ জায়গায় যাই। দুপুর পৌনে ২টার দিকে অফিসে ফিরে দেখি স ধ্বংস হয়ে গেছে।'

আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিককে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে সড়ক অবরোধের ঘটনাকে 'অবৈধ দাবি' উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বিকেলে ভাঙ্গা থানা পরিদর্শন করেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি। ভাঙ্গার ইউএনও মিজানুর রহমানও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। 

ভাঙ্গা থানার ওসি, ভাঙ্গা সার্কেল এএসপির সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

হাইওয়ে পুলিশের ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, 'মানুষ মহাসড়ক ছেড়ে বাড়ি গেছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছি।'

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম বলেন, 'ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কোনো পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি । তিনি বলেন, এই ঘটনায় মামলা হবে এবং অনতিবিলম্বে পুলিশবাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে।

দুটি ইউনিয়নের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন কোনোভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তারা যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই এলাকার জনগণ তাদের অভিযোগ যথাযথ চ্যানেলে জানাতে পারে। কোনোভাবেই রাস্তাঘাট অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

15 military officers held in army custody taken to ICT amid tight security

The tribunal is set to review the progress of two cases of enforced disappearance

17m ago