‘ভাড়ায়’ বার্জ এনে কাটা হলো বিএনপি নেতার ডকইয়ার্ডে, মামলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে 'ভুয়া মালিক সেজে' এক বিএনপি নেতার ডকইয়ার্ডে একটি নৌযান (বার্জ) কেটে ফেলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, তার মালিকানার নৌযানটি ভাড়া নিয়ে অনুমতি ছাড়াই কেটে ফেলেছেন এক ব্যক্তি।
গত সোমবার সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন নৌযানটির মালিক রাকেশ শর্মা। তিনি চট্টগ্রামের রাউজানের আন্ধারমানিকের বাসিন্দা।
মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন—চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার সরালিয়াপাড়ার মো. শফিউল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ জাফর, শাহাদাত, সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা ইকবাল, নোয়াখালীর হাতিয়ার চরবগুলার ইমানুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম, রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার গোলাম মোস্তফার ছেলে এমদাদুল হক, জাফর ও হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলার দুই নম্বর আসামি শাহাদাত হোসেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। তিনি এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ড নামে ডকইয়ার্ডের মালিক সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মামলার চার নম্বর আসামি নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারের বরাতে তিনি বলেন, নৌযানটির মালিক মূলত চট্টগ্রামের রাকেশ শর্মা। তার কাছ থেকে নৌযানটি ভাড়া নিয়েছিলেন এক নম্বর আসামি মোহাম্মদ জাফর। কিন্তু তিনি মালিককে না জানিয়েই সেটি ডকইয়ার্ডে কেটে ফেলেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাফর বাদীর পরিচিত এবং তিনি বিভিন্ন সময় পণ্য পরিবহনের জন্য 'মালেক শাহ কুতুবদিয়া' নামে নৌযানটি ভাড়ায় নিতেন। গত ১ নভেম্বর এক মাসের জন্য সাত লাখ ২০ হাজার ভাড়ায় চুক্তিও করেন। পরে চট্টগ্রামের সদরের কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়ার চরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর তীরে এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে নিয়ে যান। ২৩ নভেম্বর দুপুরে এক শ্রমিকের মাধ্যমে মালিক নৌযানটি কেটে ফেলার তথ্য পান এবং রাতেই সেখানে যান। নৌযানটি কেটে ফেলায় এক কোটি সাত লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা নৌযানটি কেটে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও মামলায় অভিযোগ করেন রাকেশ।
এ বিষয়ে রাকেশ শর্মা মোবাইল ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশ নিয়ে সেখানে যাই। পরে আমার জাহাজটি কেটে ফেলায় মামলা করি। আমি মালিক হলেও অভিযুক্তরা জাল দলিল বানিয়ে এটিকে কেটে বিক্রি করার পাঁয়তারা করেছিল। একটি চুক্তিনামাও আমি হাতে পেয়েছি যেখানে জাফর ক্রেতা এবং এমদাদুল বিক্রেতা সেজেছেন।'
বিষয়টি নিয়ে সমাধান পেতে নৌযান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসেছেন বলেও জানান রাকেশ।
এদিকে ডকইয়ার্ডের মালিকের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের দাবি, নৌযানটি কাটার জন্য তারা কেবল ডকইয়ার্ডটি ভাড়া দিয়েছেন। মোহাম্মদ জাফর নিজেকে মালিক হিসেবে দেখিয়ে এটি কাটার দায়িত্ব দেন গ্রেপ্তার নজরুলকে।
নৌযানটি ডকইয়ার্ডে রেখে কাটার জন্য ভাড়া বাবদ নজরুলের সঙ্গে এক লাখ ৬০ হাজার চুক্তিও করেন বলে জানান শাহাদাত।
তিনি বলেন, 'আমরা অনেক বছর ধরে ডকইয়ার্ড ব্যবসার সঙ্গে আছি। আমরা কখনো কোনো অনিয়মের সঙ্গে যাইনি। আমরা কেবল ডকইয়ার্ডটি ভাড়া দিয়েছি। তারা বলেছিল, জাহাজের তলা ফেটে গেছে, তাই এটি কাটতে হবে। জাহাজের মালিক হিসেবে জাফর আমাদের কাগজপত্রও দেখিয়েছেন। কিন্তু এসব তো আর আমরা বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করতে যাইনি। আর জাহাজটি কাটার কাজও করেছে নজরুল তার লোকজনের মাধ্যমেই। বিষয়টি জানার পরে আমরা নিজেরাই নজরুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেই।'
এ ঘটনায় করা মামলায় তাকে আসামি করার কথাও গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেন শাহাদাত। বলেন, 'জাহাজ কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনের ইন্ধনে ঘটনাটিতে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।'


Comments