প্রথম আলোর জরিপ

অন্তর্বর্তী সরকারে সন্তুষ্ট ৫৪ শতাংশ মানুষ, উদ্বেগ বেশি দুর্নীতি ও কর্মসংস্থানে

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১৫ মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। এ সময়ে সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তাতে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন অনেকে।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা 'গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক–রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ–২০২৫' শীর্ষক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে দেশের সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা, সংস্কার, আর্থসামাজিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তী নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মতামত নেওয়া হয়।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারের কার্যক্রমে 'কিছুটা সন্তুষ্ট' বলে জানিয়েছেন। আর 'অত্যন্ত সন্তুষ্ট' থাকার কথা বলেছেন ৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।

এর বিপরীতে সরকারের কার্যক্রমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মোট ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ 'কিছুটা অসন্তুষ্ট' এবং ৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ 'অত্যন্ত অসন্তুষ্ট'। এ ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা সন্তুষ্টও নন, আবার অসন্তুষ্টও নন।

জরিপে মোট ১১টি নির্দিষ্ট সূচকে সরকারের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি উত্তরদাতা সরকারকে সফল বলে মনে করেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো 'মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা' নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রেও সরকার ভালো করেছে বলে মত দিয়েছেন উত্তরদাতারা।

সফলতার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়ন, লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার কাজ শুরু করা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং নারীর নিশ্চিন্তে চলাফেরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকারের কাজে ৫১ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সাফল্যের পাশাপাশি পাঁচটি ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জরিপ অনুযায়ী, সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা 'কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি' করতে না পারা।

এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিগত সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সরকার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখাতে পারেনি বলে মনে করেন উত্তরদাতারা। বিশেষ করে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও কাজের সুযোগের অভাব নিয়ে মানুষ দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।

সারা দেশের মানুষের মতামত তুলে ধরতে গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। দেশের ৫টি মহানগর এবং ৫টি গ্রাম বা আধা শহর অঞ্চল থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মোট ১ হাজার ৩৪২ জন অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তবে জরিপে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা অনলাইন বা ছাপা পত্রিকা পড়েন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রাখেন। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার মাত্রা ৯৯ শতাংশ।

Comments