আর নেই ক্ষমতার দাপট, এখন আসামির কাঠগড়ায়

সকাল সোয়া ১১টা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতকক্ষে আনা হয় ১৬ আসামিকে।
তাদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, একজন সাবেক এমপি, একজন সাবেক বিচারপতি ও একজন সাবেক সচিব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অংশ হিসেবে আজ বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার গুরুত্বের তুলনায় আদালতের ভেতরের পরিবেশ ছিল একেবারে ভিন্ন। এক সময় দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই আসামিদের অনেকেই শুনানি শুরুর আগে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
কারও মুখে মৃদু হাসি, কেউ ভাবনায় মগ্ন, কেউ আবার চুপচাপ বসে জনাকীর্ণ আদালতকক্ষের দিকে উদাসীন চোখে।
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আব্দুর রাজ্জাক, ডা. দীপু মনি ও হাসানুল হক ইনু নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। শাজাহান খান কথা বলেন সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও। ইনু কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের সঙ্গে।
অপর পাশে আমীর হোসেন আমু কথা বলেন আনিসুল হকের সঙ্গে, আর কামরুল ইসলাম কথা বলেন রাজ্জাক ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে।
তবে সবাই সমান স্বস্তিতে ছিলেন না। জুনাইদ আহমেদ পলক, গোলাম দস্তগীর গাজী ও রাশেদ খান মেনন ছিলেন একদম চুপ। কেউ তাকিয়ে ছিলেন নিচের দিকে, কারও চোখে-মুখে উদ্বেগ।
কাঠগড়ায় আনার কিছুক্ষণ পরই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি খানিকটা চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি কি শিশু নাকি? আমাকে কেন বারবার কোণার চেয়ারে বসানো হয়? আমি তো অন্যদের মতোই দায়িত্ব পালন করেছি।'
প্রায় ২০ মিনিট তারা কাঠগড়ায় ছিলেন, এ সময় বিচারপতিরা তাদের চেম্বারে ছিলেন। হঠাৎ খবর আসে—মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর।
সে সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় আসামিদের আবার নিয়ে যেতে।
হাজতে ফেরার আগে আসামিদের স্বজনদের সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। আদালত প্রাঙ্গণে তখন মিশ্র আবেগের দৃশ্য—কেউ নীরবে বিদায় জানাচ্ছেন, কেউ চোখ মুছছেন।
আদালতে আনা অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মামলায় টানা চতুর্থ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে প্রসিকিউশন। মামলায় এখনো রাজসাক্ষী হিসেবেই আছেন সাবেক আইজিপি।
বিরতির পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাইবুন্যালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলেও, তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে ছোট ছোট আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হবে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে।'
Comments