শাহ আমানত বিমানবন্দরের রাজস্ব আয় ৪ বছরে বেড়েছে তিনগুণ

রাজস্ব আয় বেড়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় করেছে ২৭০ কোটি টাকার বেশি—যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।
ঢাকার বাইরে কোনো বিমানবন্দর থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে এই রাজস্ব আয় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিহাসেও রেকর্ড।
সংশ্লিষ্টদের মতে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনে বদলে যাচ্ছে এই বিমানবন্দর। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সরকারের রাজস্ব খাতেও।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
এর আগে ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে আয় ছিল ২৩৭ কোটি টাকা এবং ব্যয় ৩৬ কোটি টাকা; ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে আয় ছিল ২২৫ কোটি টাকা এবং ব্যয় হয় ৩৩ কোটি টাকা; ২০২১–২০২২ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৭৯ কোটি ও ব্যয় ২৭ কোটি টাকা এবং ২০২০–২০২১ অর্থবছরে করোনাকালে আয় নেমে গিয়েছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকায়, বিপরীতে ব্যয় ছিল ২৬ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চার বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি।
তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে রাজস্ব বৃদ্ধির মূল অবদান এসেছে উড়োজাহাজ অবতরণ খাত থেকে। এ খাত থেকেই আয় হয়েছে ১১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৪ টাকা। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে এসেছে ১০১ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩০৭ টাকা, আর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট থেকে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৭ টাকা।
শাহ আমানতে ফ্লাইট পরিচালনা বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত শাহ আমানত বিমানবন্দর হয়ে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী যাতায়াত করেছেন ৭ লাখ ১৬ হাজার ৪৫৬ জন। ২০২৪ সালে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৪০ জন, ২০২৩ সালে ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৪ জন, ২০২২ সালে ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৪ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে।
বর্তমানে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী দেশের মোট যাত্রীর প্রায় ২১ শতাংশ শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে বলে জানিয়েছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আশা, একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প, ডিজিটাল সেবা এবং নতুন রুট খোলার পরিকল্পনা এই প্রবৃদ্ধিকে আরও বাড়াবে। আগামী কয়েক বছরে রাজস্ব আয়ের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে এ ধরণের পরিবর্তন আমাদের জন্য ইতিবাচক। অবকাঠামোগত সংস্কার ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন দেশের অন্যতম গেটওয়ে। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা ও সরকারের আয় বাড়াতে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত আছে।'
সামনের দিনগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বর্তমানে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ছয়টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দুটি দেশীয় বিমান সংস্থা ও দুটি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা। প্রতিদিন গড়ে আন্তর্জাতিক রুটে ১৬টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়া, অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে এ বিমানবন্দর দিয়ে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, 'আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি এয়ারলাইনসসহ আরও কয়েকটি সংস্থা নতুন ফ্লাইট চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে যাত্রী সুবিধা যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও ঊর্ধ্বমুখী হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী বছরের শুরুতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ধারাবাহিক উন্নয়নে এই বিমানবন্দর শুধু চট্টগ্রামের নয়, বরং পুরো দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। যা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করছি।'
দীর্ঘদিন ধরে এই বিমানবন্দর থেকে নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে।
এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট নেই চট্টগ্রামের। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে শুধু রাজস্ব আয় নয়, বরং রপ্তানি-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পর্যটন খাতেও ব্যাপক গতি আসবে বলে মত প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
Comments