সুফল প্রকল্পের বাগানে সাড়ে ৩ লাখ চারার হদিস নেই

সুফল প্রকল্পের চারা লাগানো এই জায়গায় এখন কোনো গাছ নেই। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলে বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের আওতায় সৃজিত ম্যানগ্রোভ বাগানে সাড়ে তিন লাখের বেশি চারার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে সাম্প্রতিক এক সরকারি জরিপে উঠে এসেছে।

১২০ হেক্টর এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার চারা রোপণ করা হলেও, জরিপে দেখা গেছে টিকে আছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

বন বিভাগ চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের জরিপ ইউনিট গত আগস্টে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়।

বিভাগের প্রধান কাজল তালুকদারের সই করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিরসরাই রেঞ্জের তিনটি এলাকায়—ডোমখালী, মঘাদিয়া ও বামনসুন্দরে—মোট ১২০ হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছিল।

জরিপ অনুযায়ী, ডোমখালী এলাকায় ৬০ হেক্টরে রোপণ করা ২ লাখ ৬৬ হাজার চারার মধ্যে আছে মাত্র ৩৫ শতাংশ, মঘাদিয়ায় ২০ হেক্টরে লাগানো ৮৮ হাজার চারার মধ্যে ৩১ শতাংশ এবং বামনসুন্দরে ৪০ হেক্টরে লাগানো ১ লাখ ৭৭ হাজার চারার মধ্যে আছে ৩৩ শতাংশ।

গড়ে দেখা যায়, বাগানজুড়ে আছে মাত্র ৩৩ শতাংশ চারা। অর্থাৎ মোট রোপিত চারার দুই-তৃতীয়াংশই নষ্ট বা নিখোঁজ।

সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুডস (সুফল) প্রকল্পের আওতায় ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এই বাগানগুলো সৃজন করা হয়। রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগ সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে।

বনবিভাগের অভ্যন্তরীণ মানদণ্ড অনুযায়ী, সৃজনের এক বছরের মধ্যে জরিপ করতে হয় এবং উপকূলীয় এলাকায় সৃজিত বনে অন্তত ৬০ শতাংশ চারা টিকে থাকলে সেটিকে 'মোটামুটি সফল বাগান' হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসাবে মিরসরাইয়ের বাগানটি 'ব্যর্থ' বাগান।

ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান কাজল তালুকদার বলেন, 'বাগানে চারা টিকে থাকার হার অত্যন্ত কম। আমরা রিপোর্টটি প্রধান বন সংরক্ষকের দপ্তরে পাঠিয়েছি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।'

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন ও মিরসরাই রেঞ্জের তৎকালীন রেঞ্জার আবদুর গফুর মোল্লার বিরুদ্ধে বাগান সৃজনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম মেনে চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এত বিপুল সংখ্যক চারা নষ্ট হয়েছে।

তবে আবদুর গফুর মোল্লা উল্টো বনবিভাগের জরিপ ইউনিটের বিরুদ্ধে 'মনগড়া' রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ তুলে বলেন, 'ওরা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। বাগানে অন্তত ৯০ শতাংশ চারা টিকে আছে।'

গফুর মোল্লার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্নকর্মকর্তা কাজল তালুকদার বলেন, 'আমরা বনবিভাগের নিজস্ব জরিপ ইউনিট। নিয়ম মেনেই শত শত হেক্টর বাগান পরিদর্শন করি। তার অভিযোগ দায় এড়ানোর চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।'

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের একাধিক রেঞ্জার জানান, জরিপে যদি মাত্র ৩৩ শতাংশ চারা পাওয়া যায়, তাহলে প্রকল্পটি 'ব্যর্থ' বলা ছাড়া উপায় নেই।

উপকূলীয় বনবিভাগের সাবেক রেঞ্জার ও বর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগে কর্মরত কামাল উদ্দিন সুফলের আওতায় প্রায় এক হাজার হেক্টর বাগান সৃজন করেছেন।

তিনি বলেন, '৩৩ শতাংশ চারার বাগানকে সফল বলা যায় না। এটি ব্যর্থ বাগান।'

বাগান সৃজনে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করলেও চারা টিকে থাকার হার কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের ডিএফও বেলায়েত হোসেন।

তিনি বলেন, 'উপকূলে বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন। জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ে অনেক গাছ মারা যায়। তবে এত কম থাকার কথা না। কেন এমন হলো, তা খতিয়ে দেখতে একজন সহকারী বন সংরক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'

বিশ্বব্যাংকের ঋণে অর্থায়িত সুফল প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৫০২ কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশে ৭৯ হাজার হেক্টর বনভূমিতে নতুন বনায়ন করা হয়।

প্রকল্পটির উপপরিচালক আবদুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানদণ্ড অনুযায়ী বাগান সৃজন করতেই হবে। না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মিরসরাইয়ের বাগানের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর সেই সুপারিশ পাঠিয়েছি।'

Comments