চট্টগ্রামে চেকপোস্টে পুলিশ সদস্য তল্লাশি নিয়ে বিতর্ক, মাদক উদ্ধারের অভিযোগ
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় একটি চেকপোস্টে কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কনস্টেবলকে তল্লাশি ঘিরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও কক্সবাজার জেলা পুলিশের মধ্যে আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ৮ ডিসেম্বর বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক হওয়ার পর ওই কনস্টেবলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং উদ্ধার করা মাদক পরে গায়েব হয়ে যায়। তবে সিএমপি বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ওই রাতে বাকলিয়া থানার একটি টহল দল বান্দরবান ও কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এ সময় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি বাস থামিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে এক যাত্রীকে ব্যাগসহ নামানো হয়।
ওই যাত্রী নিজেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কনস্টেবল ইমতিয়াজ হোসেন সৌরভ হিসেবে পরিচয় দেন এবং কক্সবাজার নারী ও শিশু আদালতের এক বিচারকের গানম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানান।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লার বাসিন্দা ওই কনস্টেবল ২০২২ সাল থেকে সেখানে কর্মরত।
পুলিশ সূত্রের দাবি, তাকে রাস্তার পাশে একটি পুলিশ বক্সে নিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ সময় সেখানে বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তানভীর আহমেদ ও সেকেন্ড অফিসার আল আমিনসহ পুলিশের আরেকটি টিম উপস্থিত ছিল।
একাধিক সূত্রের দাবি, তল্লাশির সময় তার ব্যাগ থেকে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে মাদক উদ্ধারের পরও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার করা মাদক কোথায় গেছে, তা নিয়ে পুলিশের ভেতরেই আলোচনা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ যাচাই করতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন—এমন এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত কর্মকর্তা ও সেকেন্ড অফিসার কেন সেখানে এসেছিলেন, আমরা জানি না। তবে তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন।'
পুলিশ সূত্র জানায়, ছাড়া পাওয়ার পর ইমতিয়াজ কুমিল্লায় নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এ ছাড়া ৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৩৬ মিনিট থেকে ১০ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি সূত্র।
'কমিশনারের সঙ্গে ওসির সখ্যতার কারণে কেউ মুখ খুলছে না'
বাকলিয়া থানা ও নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সেকেন্ড অফিসার আল আমিন ও বর্তমান ওসি আফতাব উদ্দিন একই ব্যাচের। পাশাপাশি সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ওসি আফতাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে অনেকে অনিচ্ছুক।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর আফতাব উদ্দিনকে কোতোয়ালি থানার ওসি হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি এখনো সেখানে যোগ দেননি।
বর্তমান কমিশনারের সময়ে এটি তার টানা চতুর্থ ওসি পদায়ন। এর আগে তিনি চান্দগাঁও ও বন্দর থানায় দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, 'ওসি তদন্ত ও সেকেন্ড অফিসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন যে তারা ওই রাতে বালু মহলে অভিযানে ছিলেন। তল্লাশির বিষয়টি স্বীকার করলেও তারা বলেছেন, সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক আল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা ঠিক নয়। আমরা কাউকে তল্লাশি করিনি।'
পরে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি এটা একটা গুজব। আপনি থানায় এলে হয়তো বিস্তারিত বলতে পারতাম।'
অন্যদিকে সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন গত ১৬ ডিসেম্বর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নানান গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি প্রাথমিক যাচাই করেছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে মাদক উদ্ধার করে ছেড়ে দেওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।'
বিশদ তদন্ত করা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি, কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যও নেই। ফলে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের সুযোগ সীমিত।'
কনস্টেবল ইমতিয়াজ হোসেন সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পাঠানো খুদেবার্তারও কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) নাজমুস সাকিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিস্তারিত জানি না। তবে সিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমতিয়াজের বিষয়ে আমাদের কাছে খোঁজ নিয়েছিলেন। আমাদের কাছে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ আসেনি।'


Comments