যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: এএফপি
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী দ্বিতীয় সপ্তাহে পা রেখেছে। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের বিক্ষোভ চলছে।

গতকাল শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নির্মম আচরণের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি নির্মমতার চিত্র উঠে এসেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো চেষ্টাই করেনি পুলিশ।

ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, হাজারো শিক্ষার্থী, এমন কী শিক্ষকরাও পুলিশের বর্বর আচরণের শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করা হয় এবং তাদেরকে নির্বিচারে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার সকালে রায়ট পুলিশ বোস্টনের নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভকারীদের স্থাপিত শিবির সরিয়ে দেন। এ সময় বেশ কয়েক ডজন শিক্ষার্থী দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশে দুয়োধ্বনি দেন এবং তাদের এই উদ্যোগে ধিক্কার জানান।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের বাইরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের বাইরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, দুই দিন আগে শুরু হওয়া বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি 'পেশাদার সংগঠক'রা অনুপ্রবেশ করেছে, যাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন যোগসূত্র নেই। তারা 'ইহুদিবিদ্বেষী' স্লোগান দিয়েছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, 'আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘৃণা মেনে নিতে পারছি না।'

শিক্ষার্থীদের মূল দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে কোনো ধরনের তহবিল দেওয়া চলবে না। এই বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং এতে কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছেন।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের মুখোমুখী বিক্ষাওভকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: এএফপি
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের মুখোমুখী বিক্ষাওভকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের অপর দাবি হল অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চালু করা।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরো ভবন দখল করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ আগে পুলিশি অভিযানে ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা শুক্রবার বলেন, আবারও যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকে আনা হয় তাহলে 'পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হবে'।

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতা ও অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা এসব বিক্ষোভের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, এগুলো মূলত 'ইহুদি বিদ্বেষ' ছড়ানোর উদ্যোগ।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

বিক্ষোভকারীরা এই দাবি নাকচ করছেন। অসংখ্য ইহুদি ধর্মাবলম্বী সাধারণ ছাত্র এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

ইহুদি যুদ্ধবিরোধী অধিকারকর্মী স্যাম কোপরাক আল জাজিরাকে বলেন, 'হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা বাবা মায়ের সন্তান হিসেবে আমার নিজের মানুষদেরকে একই ধরনের হামলায় মেতে উঠতে দেখে আমি অত্যন্ত বিচলিত বোধ করছি।'

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী শুরু হয়েছে।

বার্লিনে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের সামনে তাঁবু খাটিয়ে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করতে বাধ্য হয়।

সুইডেনের সড়কগুলো 'ফিলিস্তিন মুক্ত কর' ও 'ইসরায়েলকে বয়কট কর' শ্লোগানে মুখরিত ছিল শনিবার।

লন্ডনের কেন্দ্রে শনিবার বিকেলে হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পথে নেমে আসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Voting in Ducsu election underway

Students started casting their votes at 8:00am across polling centres set up in residential halls amid tight security. The balloting will continue until 4:00pm.

2h ago